সিলেটের জৈন্তাপুরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ছোট ভাইয়ের হাত-পা বেঁধে মেঝেতে ফেলে রাখা এক যুবকের ছবি গত ২৯ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে আপলোড করেন বড় ভাই। ফেসবুকে হাত-পা বাঁধা ছবি পোস্ট করে বড় ভাই লেখেন ‘চোরাকারবারি সিন্ডিকেট টর্চার সেলে’ নিয়ে ওই যুবককে মারধর করা করছে।
এ ঘটনায় থানায় নির্যাতনকারী বড় ভাই লিখিত অভিযোগ করেন। আলোচিত এই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে এমন ছবি পরিকল্পিতভাবে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে জৈন্তাপুরের গোয়াবাড়িতে বিজিবি সদস্যদের একটি দল টহলে যায়। এ সময় এলাকার কয়েকজন যুবক অভিযোগ করেন- গোয়াবাড়ি এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৮৫ নম্বর ঘরের বাসিন্দা সালমান আহমদ (২৩) এলাকায় চোরাচালানের খবর বিজিবিকে জানায়। ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বিষয়টি নিয়ে জুবেল মিয়া, লিলু মিয়া ও অলি মিয়াদের সঙ্গে সেবুল ও সালমানের বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় সালমান ও তার বড় ভাই সেবুল আহমদ (২৮) প্রতিপক্ষের মারধরের শিকার হন।
এ ঘটনার পর সেবুল স্থানীয় ৫ যুবকের নাম উল্লেখ করে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ দায়েরের পর সালমানের হাত-পা বাঁধা ও মেঝেতে ফেলে রাখা একটি ছবি ফেসবুকে ছেড়ে উল্লেখ করা হয়- ‘চোরাকারবারি সিন্ডিকেট টর্চার সেলে’ নিয়ে সালমানকে মারধর করা হচ্ছে।
একটি সূত্র জানায়, সালমান ও সেবুল দুইভাই একটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সোর্স হিসেবে এলাকায় পরিচিত। যারা সেদিন তাকে ও তার ভাইকে মারধর করেছেন তারা একই এলাকার জুবেল মিয়া, লিলু মিয়া ও অলি মিয়া। তারাও ওই বাহিনীর সোর্স। এরা একসময় একই সঙ্গে চলতেন। তাদের মধ্যে পূর্ব বিরোধের জেরে মারামারির ঘটনা ঘটে।
জৈন্তাপুর মডেল ওসি মো. তাজুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ওই ছবি ফেসবুকে ছড়ানোর ঘটনায় প্রথমে সালমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার কথায় অসংলগ্নতা পাওয়া যায়। একপর্যায়ে ছবির ঘরের মেঝের সঙ্গে সালমানের ঘরের মেঝে মিলে যায়। ঘর তল্লাশি করে হাত-পা বাঁধার দড়িও পায় পুলিশ। পরে তদন্তে পুলিশ নিশ্চিত হয় টর্চার সেলে নির্যাতনের অভিযোগ এনে ছড়ানো ছবিটি সালমানের ঘরেই ধারণ করা হয়েছে। বিষয়টি সাজানো।
একপর্যায়ে বিষয়টি স্বীকারও করেন সালমান। তবে তিনি বলেন, ঘটনার সময় তিনি অচেতন ছিলেন। কে বা কারা ছবি ধারণ করেছে, সেটি তিনি জানেন না।
ওসি তাজুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ঘটনাটি সালমানের ভাই সেবুল ঘটিয়েছেন। তবে সে পালিয়ে গেছে। তাকে ধরতে চেষ্টা করছে পুলিশ।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত সেবুল মিয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তার ব্যবহৃত ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। আর ঘটনার পর থেকে হামলাকারী জুবেল মিয়া, লিলু মিয়া ও অলি মিয়াও পলাতক রয়েছেন।
মন্তব্য করুন