সরকারি অনুদানের চাল বানভাসিদের না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে ১০ কেজির জায়গায় ৭/৮ কেজি চাল দেওয়া হচ্ছে। ঘটনাটি ঘটেছে নওগাঁর আত্রাই উপজেলার হাটকালুপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে।
এই ঘটনায় ১ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন শতাধিক ভুক্তভোগী।
তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওই পরিষদের চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন।
জানা গেছে, বন্যায় জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আত্রাইয়ের হাটকালুপাড়া ইউনিয়ন। এখানকার অধিকাংশ মাঠের ফসল, ঘরবাড়ি ও পুকুর তলিয়ে গেছে পানিতে। এই পরিস্থিতিতে সরকারি অনুদানের চাল প্রকৃত বাসভাসিদের না দিয়ে পরিষদের চেয়ারম্যান তার অনুগত লোকদের দিয়েছেন বলে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। যার কারণে প্রকৃত বানভাসিরা অনুদান থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। পাশাপাশি অনুদানের চাল ১০ কেজির স্থলে ৭/৮ কেজি করে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ তাদের।
অপরদিকে চাল না পাওয়া প্রকৃত বানভাসিরা প্রতিবাদ করতে গেলে চেয়ারম্যান তার লোকজন দিয়ে তাদেরকে মারধর করেছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী শাহিন মল্লিক বলেন, আমরা দুর্যোগ এলাকার ভুক্তভোগী মানুষ দিনরাত পরিশ্রম করে বাঁধ মেরামত করেছি। সরকার আমাদের জন্য অনুদান পাঠিয়েছে অথচ চেয়ারম্যান সেই অনুদানের চাল অন্য এলাকার লোকজনদের দিয়েছে। আমি সেসব দরিদ্র অসহায় লোকদের পক্ষে কথা বলার জন্য চেয়ারম্যান সাহেবের নিকট গেলে তিনি আমার সঙ্গে উদ্ভট আচরণ করেন। একপর্যায়ে এলাপাতাড়ি মারপিট করে ঘরে আটকে রাখার হুমকি দেয়।
অভিযোগ দিতে আসা মাসুদ বলেন, যেখানে দুর্যোগ নেই বা যারা কাজ করেনি চেয়ারম্যান তাদেরকে চাল দিয়েছে। আমি জানার পর সঙ্গে সঙ্গে চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানাই। চেয়ারম্যান তখন শনিবারে চাল দিতে চায়। কিন্তু একপর্যায়ে শুক্রবার বিকেলেই চাল দেওয়ার কার্যক্রম প্রায় শেষ করে। তখন গ্রামের লোকজন সেখানে গিয়ে অনুদানের চাল চাইলে চেয়ারম্যান বলে তোদের জন্য কোনো চাল নেই।
তিনি আরও বলেন, এখানে ৪ শত লোকের জন্য সরকারিভাবে চাল দেওয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান কতজনকে চাল দিয়েছে সেটা তিনিই জানেন। তাই আমরা এর প্রতিকার চাইতে ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল খালেক বিশা বলেন, আমার ওয়ার্ডে বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে লোকজন। অথচ সেখানেই অনুদান দেওয়া হয়নি। আমি আমার গ্রামের লোকজন নিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করেছি। এই ওয়ার্ডে বানভাসির সংখ্যা অনেক বেশি। অথচ চেয়ারম্যান আফজাল আমাকে কিছু না জানিয়ে তার ইচ্ছেমতো লোকজনকে অনুদান দিয়েছে। আমার গ্রামের ৮-১০জন চাল পায়নি। আমি এই বিষয়টি চেয়ারম্যানকে জানালে তিনি কোনো গুরুত্ব দিচ্ছিলেন না। একপর্যায়ে শাহিন নামের এক ব্যক্তি চেয়ারম্যানকে বলে আমার বাড়িঘর ডুবে গেছে এবং দিনরাত কাজ করেছি। তখন বিষয়টি নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং শাহিনকে মারধর করা হয়।
অভিযোগ অস্বীকার করে হাটকালুপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন বলেন, আপনারা সরেজমিনে খোঁজ নিতে পারেন, আমি কাদের চাল দিয়েছি। যারা প্রকৃত বানভাসি এবং কাজ করেছে তাদেরকেই দেওয়া হয়েছে।
আত্রাই উপজেলার নির্বাহী অফিসার সঞ্চিতা বিশ্বাস বলেন, যারা প্রকৃত বাসভাসি ও ক্ষতিগ্রস্থ তারা অনুদানের চাল পায়নি এমন লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখাসহ পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।
মন্তব্য করুন