খুলনায় মহামারির মতো রূপ নিয়েছে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন। প্রায় প্রতিদিনই খুলনা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় ঘটছে এই পাশবিক ঘটনা। অন্যান্য শারীরিক নির্যাতনের তুলনায় ধর্ষণের ঘটনা বেশি ঘটছে। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে শিশু ও কিশোরীদের সাথে। বিচারহীনতা এবং সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে এমন ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন সমাজবিজ্ঞানীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি মাসের ১ তারিখে খুলনা নগরীর খালিশপুরে একাদশ শ্রেণির দুই ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়, ২ তারিখে ডুমুরিয়া উপজেলা ধর্ষণের শিকার হয় ১১ বছরের শিশু, ৩ তারিখে কয়রা উপজেলায় ১৪ বছরের কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়, পরের দিন ডুমুরিয়া উপজেলায় ৮ বছরের শিশু এই পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার খুলনায় পূর্ব সর্ম্পকের জের ধরে এক তরুণীকে (১৬) ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টার দিকে মহানগরীর সোনাডাঙ্গা থানাধীন ছোট বয়রা বিশ্বাস ক্লিনিকের পাশে আতিয়ারের ভাড়া বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত অ্যাম্বুলেন্স চালক শরীফ (২২) ছোট বয়রা আব্দুল গফফারের ছেলে। জানা যায়, শরীফ নিজের মায়ের অসুস্থতার কথা বলে ফোন করে মেয়েটিকে ভাড়া বাসায় নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। বাসায় ফিরে মেয়েটি তার মাকে ধর্ষণের বিষয়টি বলে দিলে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করা হয়।
এভাবে প্রায় প্রতিদিনই খুলনা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় ধষর্ণের ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের থেকে শিশু ও কিশোরীর সংখ্যা অনেক বেশি।
সূত্র জানায়, গত তিন বছরের মধ্যে খুলনা ও আশপাশের এলাকায় প্রতিদিন গড়ে একটিরও বেশি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, যার হার প্রতিনিয়ত মহামারির মতো বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২১ সালে খুলনায় নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৩৭৯ জন। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৫৭ জন, যেখানে ৯৪ জনই শিশু ও কিশোরী। ২০২০ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৯৯ জনে। যার মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৭২ জন, যেখানে শিশু ধর্ষণ হয়েছে ১০৭। তবে সব রেকর্ড ছাড়িয়ে চলতি বছরের এই ৯ মাসেই নির্যাতনের শিকার হয়ে ওসিসিতে ভর্তি হয়েছে ৫১২ জন, এর মধ্যে ১৫৯ ধর্ষণের শিকার হয়েছে যার মধ্যে ১৩২ জনই শিশু ও কিশোরী। অর্থাৎ গত তিন বছরের কম সময়ে মাসে অন্তত ১৫টি করে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে খুলনা ও আশপাশের এলাকায়।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও ওসিসি কো-অর্ডিনেটর ডা. সুমন রায় বলেন, ওসিসি হলো যৌন নির্যাতন যেটাকে আমরা ধর্ষণ বলি, আর শারীরিক নির্যাতনের শিকার হওয়া নারীদের চিকিৎসা ও আইনি সহায়তা করে থাকি। এখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যেমন আছে তেমনি পুলিশ ও আমাদের নিজস্ব আইনজীবী রয়েছে তাদের হয়ে আইনি লড়াই করার জন্য। সামাজিক অবক্ষয়ের ফলে এমন ঘটনা দিন দিন বাড়ছে বলে তিনি মনে করেন।
খুলনার নারী নেত্রী ও খুলনা উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক অ্যাড. শামীমা সুলতানা শিলু বলেন, আমাদের দেশে আইন আছে, আইনের প্রয়োগ নাই। তাই আসামিরা জামিনে ছাড়া পেয়ে আবারও একই কাজ করছে। পুলিশকে কঠোরভাবে এটা দমন করতে হবে। এ ছাড়া আমাদের আইনজীবীদের ধর্ষককে অন্যান্য অপরাধের মতো না দেখে তাদের পক্ষে আইনি লড়াইয়ে না যাওয়ার ব্যাপারে একমত হতে হবে। একইসাথে পারিবারিক শিক্ষা ও সামাজিক শিক্ষা বাড়াতে হবে।
মন্তব্য করুন