নওগাঁর মান্দায় বন্যায় আত্রাই নদীর ৬টি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রায় ১৮ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে ১৩শ বিঘা জমির আউশ ও আমন ধানের খেত। ফলে নদী পাড়ের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত কয়েক দিন অবিরাম বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে মান্দা উপজেলায় আত্রাই নদীর পানি বিপৎসীমার ১০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ মূল বাঁধের বেশকিছু এলাকা চরম ঝঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নদীপাড়ের মানুষরা। ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ইতোমধ্যে বস্তায় বালু ভরে মেরামতের জন্য একটানা কাজ করছে শ্রমিকরা। এ ছাড়া উপজেলা প্রশাসন থেকে স্থানীয় পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের নিয়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সরজমিনে দেখা গেছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নুরুল্লাবাদ ইউনিয়নের সাতটি গ্রাম। এ ইউনিয়নের নুরুল্লাবাদ, পশ্চিম নুরল্যাবাদ, শাহপাড়া, মণ্ডলপাড়া, ও পারনুরুল্লাবাদ এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে ৫০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তাছাড়া ফকিন্নি নদীর তীরবর্তী এলাকায় আরও অন্তত ৭০০ পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় আছে। এদিকে কশব ইউনিয়নে পাঁজরভাঙ্গা, প্রসাদপুর ইউনিয়নে বাইবুল্যা ও বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের কয়লাবাড়ি এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এসব এলাকায় আরও অন্তত ৫০০ পরিবার পানিবন্দি রয়েছে।
পাঁজরভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা মো. মামুন বলেন, প্রায় চার বছর পূর্বে এই বেড়িবাঁধটি ভেঙে যায়। তারপর থেকে এ বাঁধটি আর সংস্কার করা হয়নি। ফলে প্রতিবছর বিভিন্ন স্থানে ভেঙে গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়েছি আমরা। বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। তাই আমরা এই বেড়িবাঁধটির সংস্কার করার জন্য প্রশাসনের কাছ দাবি জানাচ্ছি।
বিষ্ণুপু ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এস এম গোলাম আজম বলেন, এ গ্রামের পানিবন্দি মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। আমরা তাদের পাশে থেকে সার্বক্ষণিক তদারকি করছি। তবে কয়লাবাড়ি বেড়িবাঁধের ভাঙন স্থানটি মেরামত না করায় ওই স্থান দিয়ে পানি অনায়াসে গ্রামে ঢুকে পড়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ২০০ পরিবার। একই সঙ্গে তলিয়ে গেছে অন্তত ৩০০ বিঘা জমির আমন ধানের ক্ষেত।
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, গত মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত এ নদীর পানি বিপৎসীমার ১০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বুধবার পর্যন্ত নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে।
এ বিষয়ে উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন বলেন, আত্রাই নদীর বন্যার পানিতে ফসলের জমি তলিয়ে গেছে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা বন্যাকবলিত এলাকায় ঘুরে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করছেন। এতে কী পরিমাণ ফসল ক্ষতির হতে পারে তা দুএক দিনের মধ্য তথ্য জানা যাবে।
মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লায়লা আঞ্জুমান বানু বলেন, নৌকাযোগে বন্যাকবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। বন্যায় ফসলের ক্ষয়ক্ষতির কী পরিমাণ হতে পারে তা কাজ করছে কৃষি বিভাগ। তবে প্লাবিত এলাকা সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন