শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খালের মধ্যেই স্থাপনা তৈরি করে অবাধে চলছে দখলের প্রতিযোগিতা। দূর থেকে বোঝার উপায় নেই খালের অস্তিত্ব। কোথাও বা পাড় ঘেঁষে আবার কোথাও মাঝে আরসিসি পিলার দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বসতবাড়ি। এক সময়ের খরস্রোতা খাল এখন মানুষের দখলে চলে গিয়ে যেন মরা ডোবায় পরিণত হয়েছে। ভেদরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে।
এ ছাড়াও ভেদরগঞ্জ পৌরসভার উত্তর বাজার, কলেজ গেইট, মহিষার ইউনিয়নের বেইলি ব্রিজ, রামভদ্রপুর ইউনিয়নের রামভদ্রপুর বাজারে খাল, আরশি নগর, চরভাগা, তারাবুনিয়া, উত্তর তারাবুনিয়া, বালার বাজার, হরিনা ফেরিঘাট, সাজনপুর বাজার এলাকাগুলোসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকাতে এভাবেই নির্মিত হচ্ছে স্থাপনা।
এ নিয়ে বেশ কয়েকবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ জানিয়েও তেমন কোনো প্রতিকার পায়নি বলে দাবি স্থানীয়দের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দখলদাররা বেশিরভাগ স্থানীয় প্রভাবশালী এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী। তাই কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করেই সরকারি খাল দখলে মেতে ওঠেন। কোনো কোনো সময় ভুয়া ডিসিআর তৈরি করে ও স্থানীয় তহসিলদারদের ম্যানেজ করে খাল দখলে করে থাকেন তারা। খাল দখলে সবচেয়ে এগিয়ে উপজেলার সখিপুর বাজারের খাল। পুরো খাল দখল করে দোকান নির্মাণ করেছে কিছু অসাধু চক্র। এসব চক্রের কাছে প্রশাসন নির্বিকার।
এ ছাড়াও ভেদরগঞ্জ উপজেলার শতাধিক খাল দখল ও ভরাট হয়ে গেছে। এক সময় এইসব খাল দিয়ে ছোট-বড় নৌকা চলাচল করলেও এখন পানি যাওয়ায় মুসকিল। সরকারি এসব খালগুলো এখন ছোট ড্রেনে পরিণত হয়েছে। এ কারণে এখন বৃষ্টি হলেই পানি জমাট হয়ে থাকে।
আমির হোসেন নামেন সখিপুর বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, গায়ের জোর খাটিয়ে খালের জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করছে ভূমিখেকোরা। আমরা বেশ কয়েকবার বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেও উল্টো আমাদের মামলা-হামলার ভয় দেখিয়ে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছে। খালের মুখ বন্ধ করে স্থাপনা নির্মাণের ফলে বর্ষা মৌসুমে পানিপ্রবাহের মুখ বন্ধ হয়ে আমাদের বসতবাড়িসহ চাষের জমিতে পানি প্রবাহিত হয়। এতে একদিকে যেমন সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা, অপরদিকে ফসল ক্ষতি হয়ে আমাদের লোকসানের মুখে পড়তে হয়। আমরা এ বিষয় নিয়ে বেশ কয়েকবার প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেও এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিকার পাইনি।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ইতোমধ্যে আমরা দখল হয়ে যাওয়া ৪টি খাল উদ্ধার করে খনন সম্পূর্ণ করেছি। আরও ১০টি খাল খননের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। সরকারি জায়গা দখলকারী সকলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ সরকারি জায়গা বা সরকারি খাল দখল করার চেষ্টা করলে আমরা তাৎক্ষণিক তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব। এ নিয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি।
মন্তব্য করুন