ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি বসবাসরত ১ লাখ ২৩ হাজার মানুষের চিকিৎসাসেবার একমাত্র মাধ্যম। উপজেলার এই হাসপাতালে বিভিন্ন এলাকা থেকে চিকিৎসার জন্য আসেন রোগীরা। চিকিৎসার মান ভালো হলেও খাবারের বিষয়ে চরম অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়।
ঠিকাদার অধিক লাভের জন্য রোগীদের খাবার পরিবেশনে চরম দুর্নীতি করছে বলে জানান হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। প্রতিদিন দুপুর ও রাতে দুই বেলা ভাত দেওয়া হয় রোগীদের। দুই বেলায় ৬২ জন রোগীর খাবার জন্য মাছ ও মুরগির মাংস দেওয়ার কথা থাকলেও সেক্ষেত্রে প্রতিদিন বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ কেজি ৩০০ গ্রামের একটি মুরগি। অনেক রোগীর অভিযোগ সকালের নাশতায় ডিম কলা পাউরুটি থাকলেও অনেক সময় পচা ডিম পচা কলা দেওয়া হয় রোগীদের। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানালেও রোগীরা পাচ্ছে না এর প্রতিকার।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এই হাসপাতালের খাবার পরিবেশনের দায়িত্বে রয়েছেন, মেসার্স আলম ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী শর্শদী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জানে আলম। এই হাসপাতালে প্রতিদিন প্রতিজন রোগীর জন্য ১৭৫ টাকা করে বরাদ্দ রয়েছে সরকারিভাবে। সকালের নাশতা ৩৫ টাকা, দুপুরের খাবার ৭০ টাকা, রাতের খাবার ৭০ টাকা। সব মিলিয়ে বর্তমানে একজন রোগীর জন্য ঠিকাদার গড়ে ৬০ টাকাও খরচ করছে না বলে জানান তারা।
এ বিষয়ে হাসপাতালে খাবার সরবরাহকারী মেসার্স আলম ব্রাদার্স এর স্বত্বাধিকারী জানে আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি মোবাইল ফোনে বলেন, রোগীদের জন্য যা বরাদ্দ তাই দেওয়া হচ্ছে ৩১ জন রোগীর জায়গায় যদি ৭০ জন রোগী ভর্তি থাকে তবে আমি বরাদ্দের বাইরে গিয়ে বাকি ৪০ জনের খাবার কোথায় থেকে সরবরাহ করব। হাসপাতালে রোগীদের জন্য বরাদ্দের বাইরে গিয়ে আমার পক্ষে খাবার সরবরাহ করা সম্ভব নয়।
হাসপাতালে ভর্তি রোগী মরিয়ম (৪৫) এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজ ৪ দিন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি, আমরা গরিব মানুষ চিকিৎসা নেওয়ার জন্য আসছি। খাবারের যে মান তা আসলে সব চেয়ে নিম্নমানের। মাংস কখনো দেওয়া হয় না। শুধু আলু দেওয়া হয় এবং একটু পাতলা ডাল দেওয়া হয়। যে খাবার হাসপাতালে দেওয়া হয় তা গরিব মিসকিনেও খায় না। যারা এই খাবার পরিবেশনের দায়িত্বে আছে তারা রোগীদের হক মেরে খাচ্ছেন।
ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বাবুর্চি মো. আব্দুল হাই এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রতিদিন ৩১ এর দ্বিগুণ ৬২ জন রোগীর জন্য আমাকে এক কেজি ৩০০ গ্রাম মুরগি দেওয়া হয়। জবাই এর পরে কাটাবাছা করে, এই মুরগিকে ৬২ পিস করে রোগীদের দিতে হয়। মুরগি কাটতে গিয়ে আমার হাত যে কাটে না এ জন্য আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি।
ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মো. রুবায়েত বিন করিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, হাসপাতালে খাবার পরিবেশনের এই অনিয়মের অভিযোগ শুনেছি, রোগীরাও অভিযোগ দিয়েছে, বাবুর্চি ও আমাদের বলেছে, আমরা আমাদের পক্ষ থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারবার বলেছি।
মন্তব্য করুন