মানিকগঞ্জের সিংগাইরে চুরির উপদ্রপ বেড়েই চলছে। কোনোভাবেই থামছে না চুরি। অহরহ চুরির খবর পাওয়া গেলেও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, চুরির অভিযোগ নেওয়া হয় না। চোরও ধরা পড়ছে না। তাই রাতে সজাগ থেকেই গ্রামের পাড়া-মহল্লায় পাহারা দিতে হচ্ছে তাদের।
আলীনগর গ্রামের মিথিলা আক্তার নামে এক নারী বলেন, ১৩ সেপ্টেম্বর ভোরে রবিন ও শফিকুল নামে চিহ্নিত দুই চোর ঘুমন্ত অবস্থায় গলার স্বর্ণের চেইন টান দেওয়ার সময় চিৎকার দিলে কেচি দিয়ে তার মুখে আঘাত করে দুটি মোবাইল সেট নিয়ে পালিয়ে যায়। চোরদের নাম বললেও পুলিশ নিয়েছে রাস্তায় আমার মোবাইল হারানোর জিডি। দুদিন আগে রাতে চুরি হয় রামকান্তপুরে অটোচালক ছালাম মৃধা ও বিল্লাল হোসেনের ছেলের বাড়িতে। শায়েস্তার গোবিন্দ নগরের মুদি ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন বলেন, ৫ সেপ্টেম্বর রাতে তার বাড়ির গেট ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে চোর। ২০ ভরি স্বর্ণ ও ৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা নিয়ে যায় তারা।
পৌরসভার বিনোদপুরের ব্যবসায়ী রামপদ দাস বলেন, ৩১ আগস্ট রাতে তার গোডাউনের দরজা ও সাটারের তালা ভেঙে ১২৯ বস্তা চাল ট্রাকযোগে নিয়ে যায় চোর। যার বাজার মূল্য ২ লাখ ৬৩ হাজার ৪৫০ টাকা। থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি কিন্তু পুলিশ তৎপর না।
তবে স্থানীয় থানার এসআই সুমন বলেন, সিসি ক্যামেরায় চাল বহনকারী ট্রাকটি শনাক্ত করা গেছে। সোর্স লাগানো হয়েছে, চোর ধরা পড়বে।
এর আগে ২৫ আগস্ট রাতে ওয়াইজনগরের শেখ আইজুদ্দিনের বাড়ির গেটের তালা কেটে ঘর থেকে ২০ ভরি স্বর্ণ ও একটি মোবাইল সেট চুরি হয় বলে তার আত্মীয় আব্বাস মেম্বার জানান।
এ ব্যাপারে শান্তিপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. খালিদ মনসুর বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। চোর ধরার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
রামনগর সরকারি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক কার্তিক মন্ডল বলেন, ২৯ আগষ্ট রাতে তার ঘর থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও মোবাইল সেট নিয়ে যায়। এ সময় চোরকে ধাওয়া দিলে আমাকে ইট দ্বারা আঘাত করা হয়। থানায় গেলে এক এসআই মোবাইল হারিয়ে যাওয়ার জিডি নিয়ে বললেন, চুরির বিষয়টি উল্লেখ করার দরকার নেই। রামকান্তপুর গ্রামের আজাদ মৃধার দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে চোর স্বর্ণালংকারসহ ৫ লাখ টাকার মালামাল চুরি করে।
একই গ্রামে বাহের আলী বাড়ি থেকে এক রাতে ব্যাটরিচালিত অটোরিকশা এবং ২৪ আগস্ট ফতেহপুর গ্রামে আজিজুর রহমানের বাড়ি থেকে অটোরিকশা চুরি হয়। ৫ সেপ্টেম্বর ভূমদক্ষিণ দক্ষিণ পাড়ায় দিনে দিদার মিস্ত্রি এবং এর কয়েক দিন আগে ফোর্ডনগরের তৈয়ব আলীর ছাগল চুরি হয়। ৩ চোর ধরে পুলিশে দেওয়া হয়। কাশেম নগরের বাসিন্দা দোলনা আক্তার জানান, সিংগাইর বাজারে দিনদুপুরে তার ভাবির কাছ থেকে গহনা ছিনিয়ে নেয়।
এভাবেই আরও চুরির খবর পাওয়া গেছে। মানিক নগর বাজারের চিকিৎসক জব্বার বলেন, চুরির পাশাপশি সন্ধ্যার পর এ বাজারে মাদকের আসর বসে। চোরের উপদ্রপ প্রসঙ্গে সিংগাইর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ ইমরান বলেন, আমাদের টহল পুলিশ আরও জোরদার করতে হবে।
চুরির অভিযোগ নেওয়া হয় না, নেওয়া হয় হারিয়ে যাওয়ার জিডি এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ওসি সাহেবের সঙ্গে আলাপ করব, এসব ব্যাপারে কী করা যায়।
সিংগাইর থানার ওসি সৈয়দ মিজানুর ইসলাম বলেন, এসব চুরির ঘটনায় কেউ থানায় আসেনি। অনেকে মামলা করতে চান না।
মন্তব্য করুন