সুবর্ণচরে নৌকার পক্ষে ভোট করায় ওয়ার্ড যুবলীগের এক নেতাকে তুলে নিয়ে দুই পায়ে গুলি করার অভিযোগ উঠেছে চরজব্বর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে।
নির্যাতনের শিকার মো. হোসেন (৩১) উপজেলার চরজব্বর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সক্রিয় কর্মী ও সংগঠনের সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছে। সে একই এলাকার জামাল উদ্দিনের ছেলে।
মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরের দিকে উপজেলার চরজব্বর ইউনিয়নের চেউয়াখালী বাজারে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত মোহাম্মদ ওমর ফারুক সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এবং চরজব্বর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান। গত ইউপি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে হারিয়ে তিনি ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
ভুক্তভোগী মো. হোসেন বলেন, আমি পেশায় একজন ট্রাক ড্রাইভার। গত ইউপি নির্বাচনে আমি নৌকার প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম বিএসপির পক্ষে ভোট করি এবং টাকা খরচ করি। এটাই হচ্ছে আমার বড় অপরাধ। এ নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ওমর ফারুক আমার ওপর ক্ষুব্ধ ছিল পূর্বেও।
গত মঙ্গলবার দুপুরের দিক চেউয়াখালী বাজারের একটি চায়ের দোকানে চেয়ারম্যান অনুসারী এক যুবকের সঙ্গে আমার কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে চেয়ারম্যান ওমর ফারুক ওই চায়ের দোকান এসে মানুষের সামনে আমার পেটে পিস্তল ঠেকিয়ে আমাকে তার প্রাইভেটকারে করে উঠিয়ে নিয়ে যায়। তারপর একটি বাড়িতে নিয়ে আমার দুই পায়ে গুলি করে চেয়ারম্যান নিজেই।
এরপর গুলিবিদ্ধ স্থানে তারকাটা ঢুকিয়ে দেয়। ওই সময় চেয়ারম্যান আমার মুঠোফোনসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র গায়েব করে ফেলেন। তারপর চৌকিদার নুরউদ্দিনকে দিয়ে আমাকে হাসপাতালে পাঠায় চেয়ারম্যান।
চরজব্বর ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক মো. বদিউল আলম বলেন, বর্তমান চেয়ারম্যান আনারস প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়। চায়ের দোকানে তার অনুসারীদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় ইউপি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট তরিকুল ইসলাম বিএসসির অনুসারী যুবলীগ নেতা হোসেনের। পরে চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে তার অনুসারী রাসেদ, মুরগি মিজান, সুমন, শাওন, বানু, সোহেল চা দোকান থেকে হোসেনকে তুলে নিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে এবং দুই পায়ে গুলি করেন।
যুবলীগ নেতা গণমাধ্যম কর্মীদের আরও বলেন, ওমর ফারুক চেয়ারম্যান নির্বাচনের পর আরও অনেক ঘটনা ঘটিয়েছে প্রকাশ্যভাবে। কিছু হলেই গাড়ি নিয়ে চলে যায়। এরপর মারধর করে থানায় দিয়ে দেয়। পরে প্রকৃত ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নিয়ে তার অনুসারী কিছু সংবাদকর্মীদের দিয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা নয়ন অভিযোগ করেন, সুবর্ণচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত ডাক্তার ও নার্স এবং চেয়ারম্যান ওমর ফারুকের ব্যক্তিগত সহকারীর উপস্থিতিতে হোসেনের পা থেকে গুলি-তারকাটা বের করে দ্রুত সরিয়ে ফেলে। হাসপাতালের সিসি টিভি ফুটেজে সব তথ্য সংরক্ষণ রয়েছে। সিসি টিভি ফুটেজ উদ্ধার করলেই প্রশাসন প্রকৃত তথ্য খুঁজে পাবেন। পরে এ নিয়ে হাসপাতালে আমরা বাগবিতণ্ডা করলে ডাক্তার বলে পায়ে কোনো গুলি পাইনি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চরজব্বর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. ওমর ফারুক অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, গুলির বিষয়টি ডাহা মিথ্যা।
তিনি বলেন, গত কয়েকদিন যাবত চরজব্বর ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় চুরি হচ্ছে। গত শুক্রবার চরজব্বর ভূঁইয়ার হাটের একটি দোকানে চুরি হয়। স্থানীয় জনগণ হোসেনকে চোর সন্দেহে হাতেনাতে ধরে।
এরপর সে চুরির বিষয়টি স্বীকার করে। পরে জনগণ তাকে মারধর করে আমাকে অবহিত করে। আমি চৌকিদারকে বললে চৌকিদার তাকে নিয়ে হাসপাতালে যায়। সেখান থেকে কিছু স্থানীয় সন্ত্রাসী নবী মেম্বার, বাজারের সেক্রেটারি শাহজাহান, রতনসহ আরও কিছু সন্ত্রাসী চৌকিদার থেকে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
চরজব্বর ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক মো. বদিউল আলমের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান ওমর ফারুক বলেন, তার বিরুদ্ধেও গত কয়েক দিন আগে বোর্ড অফিসে আমার কাছে চুরির অভিযোগ এসেছে। ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম বলেন, এক্স-রে না করা পর্যন্ত গুলি করা হয়েছে কিনা এ বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে তিনি বুধবার ফোন দিলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে বলে মন্তব্য করেন।
চরজব্বর থানার ওসি দেবপ্রিয় দাশ বলেন, এ ঘটনায় কেউ এখনো লিখিত কোনো অভিযোগ দেয়নি। তবে শুনেছি মারামারি হয়েছে। গুলি ছোড়ার বিষয়ে কিছু শুনিনি।
মন্তব্য করুন