সাতক্ষীরার সুন্দরবন সংলগ্ন শ্যামনগরে মেয়েদের এক জমকালো ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের স্মরণে দুটি দলে অংশগ্রহণ করে দেশীয় ক্লাবের একঝাঁক তরুণী ফুটবলার। ইয়াং টাইগ্রেসদের পায়ের জাদু দেখতে মাঠে ছিল হাজার হাজার দর্শকদের সরব উপস্থিতি।
মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনি ইউনিয়নের আড়পাঙ্গাসিয়া প্রিয়নাথ (পিএন) হাইস্কুল মাঠে এ খেলার উদ্বোধন করেন সাতক্ষীরা ৪ আসনের সংসদ সদস্য এস এম জগলুল হায়দার।
বুড়িগোয়ালিনি যুব ব্যাসিক ফুটবল একাডেমি বনাম সাতক্ষীরা রসুলপুর ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুটি দল প্রীতি প্রমিলা ফুটবলে অংশগ্রহণ করে।
খেলার প্রথম ১৫ মিনিটে লিড ২ গোলে এগিয়ে যায় বুড়িগোয়ালিনি যুব বেসিক ফুটবল একাডেমি। খেলায় দ্বিতীয়ার্ধে আরও ২ গোলে গোলে এগিয়ে ৪-০ গোলে জয় পায় বুড়িগোয়ালিনি যুব বেসিক ফুটবল একাডেমি।
স্থানীয় বুড়িগোয়ালিনি যুব বেসিক ফুটবল একাডেমি ও আড়পাঙ্গাশিয়া অগ্রদূত সংঘের আয়োজিত খেলায় ২০ টাকা মূল্যের প্রবেশ টিকেট রেখেছিল আয়োজক কমিটি। খেলা দেখতে দুপুর থেকেই আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে নানা বয়সী নারী-পুরুষ ছুটে আসেন। খেলা শুরুর আগেই মাঠের চারপাশ ভরে ওঠে দর্শকে। যেখানে নারীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
দর্শক সারিতে ফুটবল খেলা উপভোগ করছিলেন প্রমিলা নামে এক কিশোরী। তিনি বলেন, ‘আমরা সকলে একসঙ্গে খেলা দেখতে এসেছি। মেয়েদের ফুটবল খেলা দেখতে পেরে অনেক ভালো লাগছে। তাদের দেখে আমরাও অনুপ্রাণিত হচ্ছি।’
সুমনা রানী, সুচ্চন্দা মণ্ডল রেখা রানী বলেন, ‘সর্বক্ষেত্রেই নারীরা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। পুরুষের চেয়ে নারীরা আর কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। মেয়েদের আজকের এই ফুটবল খেলা সেটিই প্রমাণ করে। মেয়েদের ফুটবল খেলা হবে শুনে সকাল বেলা শ্বশুর বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে এসেছি।’
ষাটোর্ধ্ব ইউনুস আলী মাঠের একপাশে হাঁটুগেড়ে বসে খেলা দেখছিলেন এবং বাদাম খাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘খেলার কথা শুনলে আমি সেখানে ছুটে যাই। আজও এসেছি। তবে এবার মেয়েদের খেলা দেখছি। তাদের খেলা দেখে বেশ ভালো লাগছে।’
খেলাটির আয়োজক কমিটি বলেন, ‘প্রতিবছরই বিভিন্ন খেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। গ্রামীণ জনপদের হারিয়ে যাওয়া খেলাগুলোকে টিকিয়ে রাখতেই এই আয়োজন। তবে এবার মেয়েদের ফুটবল খেলা প্রথম। আগামীতে সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা পেলে এ ধরনের আরও আয়োজন করা যাবে।’
খেলার প্রধান অতিথি এস এম জগলুল হায়দার বলেন, সুন্দরবন সংলগ্ন এ জনপদে মহিলা ফুটবলের কথা ভাবাই যায় না। তবে আয়োজক কমিটি সেটি সম্ভব করেছেন। এ ধরনের আয়োজনে আমার সব সময় সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। গ্রাম বাঙলার ঐতিহ্য এবং গ্রামীণ খেলাকে টিকিয়ে রাখতে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। বর্তমান সরকার খেলাধুলার ব্যাপারে ভীষণ আন্তরিক। নারী ফুটবল এবং ক্রিকেটে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে।
খেলায় ৪-০ গোলের ব্যবধানে জয়লাভ করে বুড়িগোয়ালিনি যুব বেসিক ফুটবল একাডেমি প্রধান অতিথি এস এম জগলুল হায়দারের হাত থেকে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি গ্রহণ করে প্রমিলা মহিলা ফুটবল দল।
মন্তব্য করুন