চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে ছেলের ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পারায় দরিদ্র বৃদ্ধ বাবার একমাত্র সম্বল ভ্যান নিয়ে গেছে বেসরকারি সংস্থা আদ-দ্বীন ওয়েল ফেয়ার সেন্টারের মাঠকর্মী ফারিহা। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন বৃদ্ধ আব্দুল করিম (৭৫)। ছেলে মো. লিটনের (৩৫) স্ত্রীর অসুস্থতার কারণে মাত্র দুটি কিস্তি পরিশোধ না করায় এনজিওকর্মী এ পদক্ষেপ নেন।
রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলার নারায়ণপুর মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী পরিবার জানান, গত দুই মাস আগে আদ-দ্বীন ওয়েল ফেয়ার সেন্টার থেকে ৬০ হাজার টাকা ঋণ নেন বৃদ্ধ আব্দুল করিমের ছেলে মো. লিটন। ঋণ নেওয়ার কিছুদিন পর আর্থিক অনটনে পড়ায় তিনি তার স্ত্রীরসহ পরিবার নিয়ে ঢাকায় চলে যায়। ঢাকায় যাওয়ার পর প্রতি সপ্তাহে ১৫০০ টাকা করে ঋণের তিনটা কিস্তির টাকা পাঠায়। গত দুমাস ধরে লিটন ও তার স্ত্রী আসমা খাতুন অসুস্থ হওয়ায় চিকিৎসা করাতে অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এ জন্য কিস্তি বাকি পড়ে যায়। এতে এনজিও কর্মী ফারিহা লিটনের বাবা ঋণের জামিনদার হওয়া তাকেসহ তার শ্বশুর বাড়ির লোকজনের ঋণের টাকা আদায়ের জন্য ভয়-ভিতি দেখান। এতে টাকা আদায় না হওয়ায় গতকাল দুপুরে ভ্যান নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে বৃদ্ধ আব্দুল করিমের ভ্যানটি আটকিয়ে রাখে এনজিওকর্মী ফারিহা।
ভুক্তভোগীর মেয়ে বলেন, আমার ভাই আদ-দ্বীন থেকে দুই মাস আগে ৬০ হাজার টাকা কিস্তি তোলেন। তারা তিনটা কিস্তি দিয়েছেন। ঢাকায় গিয়ে অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় তারা কিস্তি দিতে পারেননি। এজন্য ওই এনজিওকর্মী আমার বাবার ভ্যানটা কেড়ে নিয়েছেন।
ভুক্তভোগী আব্দুল করিম বলেন, আমার ছেলে লোন নিয়েছিল। সেখানে আমি স্বাক্ষর করেছিলাম। গতকাল দুপুরে আমি ভাড়া মেরে বাড়ি আসার সময় আমার ভ্যানটা তারা কেড়ে নিয়ে গেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আদ-দ্বীন ওয়েল ফেয়ার সেন্টারের মাঠকর্মী ফারিহাকে তার অফিসে না পাওয়ায় মোবাইলে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
আদ-দ্বীন ওয়েল ফেয়ার সেন্টারের জীবননগর শাখার ম্যানেজার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, গতকাল অফিস থেকে বের হওয়ার সময় ভ্যানচালকের নাতি এসে বিষয়টি জানিয়েছিল। আমি মাঠকর্মীর সাথে কথা বলে বিষয়টি শুনে তাকে ভ্যান নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলাম। তারপর আর আসেননি।
গ্রাহকের বাবার ভ্যান নিয়ে আসা অফিশিয়াল কোনো নিয়মে আছে কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা অফিশিয়াল কোন নিয়ম না। তাছাড়া তারা পরবর্তীতে যোগাযোগ না করায় ভ্যানটি ফেরত দেওয়া সম্ভব হয়নি।
জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জাবীদ হাসান বলেন, এ বিষয় আমার জানা নেই, কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি, ভুক্তভোগীর অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাসিনা মমতাজ বলেন, গতকাল রাতে একজন আমাকে এ বিষয়ে জানিয়েছে, আমি তাদের আসতে বলেছি, তারা আসেনি। আমি নিজে তাদের সময় দিব যাতে তারা ভ্যানটি ফেরত দেয়।
মন্তব্য করুন