ময়মনসিংহ ব্যুরো
প্রকাশ : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০১:০৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ময়মনসিংহ মেডিকেলে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি তৃতীয় দিনে গড়াল

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ছবি : কালবেলা
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ছবি : কালবেলা

আনসার সদস্যের সঙ্গে রোগীর বাগ্‌বিতণ্ডা। তার রেশ ধরে নারী চিকিৎসককে গালাগালের অভিযোগ। পরবর্তীতে ঘটনা গিয়ে গড়ায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক ও হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষে। এতে আহত হন দুই পুলিশ সদস্যসহ ৮ ইন্টার্ন চিকিৎসক।

গত বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাতের এ ঘটনার পর বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) থেকে হাসপাতালে কর্মবিরতিতে রয়েছেন শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা। শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলমান রয়েছে।

ইন্টার্ন চিকিৎসকদের অভিযোগ, হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে বাগ্‌বিতণ্ডার ঘটনা সমাধান করতে কয়েকজন শিক্ষানবিশ চিকিৎসক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়িতে গেলে পুলিশ সদস্যরা তাদের ওপর হামলা চালান। তবে পুলিশের দাবি, হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। কারণ, ওই সময় ফাঁড়িতে মাত্র ছয়জন পুলিশ সদস্য ছিলেন, বিপরীতে শিক্ষানবিশ চিকিৎসক ছিলেন অন্তত ১৫০ জন।

ওই ঘটনায় শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের ডাকা কর্মবিরতি আজ শনিবারও পালন করা হচ্ছে। তবে এতে চিকিৎসাসেবায় কোনো প্রভাব পড়েনি বলে দাবি করেন হাসপাতালের উপপরিচালক জাকিউল ইসলাম। তিনি বলেন, শিক্ষানবিশদের কর্মবিরতির কারণে নিয়মিত চিকিৎসকেরা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেছেন।

জানা গেছে, বুধবার রাত ১০টার দিকে স্ত্রী নিলুফা ইয়াসমিনের চিকিৎসার জন্য শেরপুর থেকে মমেক হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে যান মাহমুদুল হাসান নামে পুলিশের এক সহকারী উপপরিদর্শক। তিনি কক্সবাজার জেলা পুলিশে কর্মরত রয়েছেন। এ সময় তিনি নিজের পরিচয় দিয়ে স্ত্রীকে আগে দেখানোর চেষ্টা করেন মাহমুদুল। অন্য রোগী থাকায় আগে দেখানো যাবে না বলে তাকে জানায় দায়িত্বরত আনসার সদস্য মোবারক হোসেন। একপর্যায়ে সে মাহমুদুলকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। এতে শুরু হয় বাগ্‌বিতণ্ডা। এ সময় হট্টগোল দেখে সেখানে কর্তব্যরত নারী ইন্টার্ন চিকিৎসক রোগীর স্বজনদের সরিয়ে দিতে বলেন আনসার সদস্যকে। এ সময় মাহমুদুলের ছেলে মাহাদি ওই চিকিৎসককে গালি দেয়। এতে আনসার সদস্য ক্ষিপ্ত হলে একপর্যায়ে মাহমুদুল হাসান জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ এ ফোন করে পুলিশের সহায়তা চান। পরে মেডিকেল পুলিশ ক্যাম্পের পুলিশ গিয়ে রোগীসহ স্বজনদের পুলিশ ক্যাম্পে নিয়ে যান। এ ঘটনায় ইন্টার্ন চিকিৎসককে নিয়ে পুলিশ ক্যাম্পে গিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকের সঙ্গে খারাপ আচরণ করার কারণ জানতে চান ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. মাহিদুল হক অয়ন। এতে আবারও শুরু হয় বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু হয়। এ পর্যায়ে ওই ওয়ার্ডে চিকিৎসককে গালি দেওয়া রোগীর ছেলে মাহাদিকে আঘাত করে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। এ সময় উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা তাদের বাধা দিলে আঘাত পায় ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. অয়ন। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের পুলিশ মেরেছে এমন খবর পেয়ে সকল ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থী মেডিকেল পুলিশ ক্যাম্পে গেলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। ওই সময় পুলিশের সঙ্গে ইন্টার্ন চিকিৎসকের মারামারিতে অন্তত ৮ জন আহত হন। এর মধ্যে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাবেক সভাপতি ডা. শামীম রেজা ও ডা. সাদিককে আইসিইউতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় বুধবার রাতভর হাসপাতালে বৈঠক হয়। সেখানে সিটি মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু ও জেলা পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঁঞাসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘ আলোচনার পর পুলিশের মেডিকেল ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই রফিকুল ইসলাম ও আরিফুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যাম্পের সকল পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করে পুলিশ ক্যাম্পটি সরিয়ে নেওয়া হয়।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি মাহিদুল হক বলেন, ওয়ার্ডে ঘটে যাওয়ার ঘটনার সমাধানের উদ্দেশ্যে আমরা কয়েকজন পুলিশ ফাঁড়িতে গেলে পুলিশ সদস্যরা আমাদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করেন। এ খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে দ্রুত আরও অনেক ইন্টার্ন চিকিৎসক পুলিশ ফাঁড়ির সামনে যান। তবে তারা কেউ উগ্র আচরণ করেননি। আমরা বুধবার রাতের ঘটনার জন্য দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিচার চাই। আজ এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের সভা আছে। এরপর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শাহ কামাল আকন্দ বলেন, পুলিশ ফাঁড়ির ভেতরে অনেক কিছু ভাঙচুর অবস্থায় পাওয়া গেছে। তারপরও শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের দাবির মুখে ঘটনার কোনো প্রকার তদন্ত ছাড়াই ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামসহ দুজনকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হানুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।

অন্যদিকে সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন কমিটি করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। তিন কর্মদিবসের মধ্যে সেই প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে লাখ টাকা জরিমানা

ক্রেতা সেজে মাদক কারবারিকে ধরল ডিবি পুলিশ

যোগদান করলেন বাকৃবির নবনিযুক্ত উপাচার্য

ডর্‌পের কর্মশালায় ‘স্মোকিং জোন’ বিলুপ্তির প্রস্তাব

হত্যা মামলায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শাহ আলী গ্রেপ্তার

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ইবিতে মিছিল

সিলেটে পাথরবোঝাই ট্রলিচাপায় কিশোর নিহত

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ববিতে বিক্ষোভ

ব্রাহ্মণপাড়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মারধর ও লাঞ্ছিতের অভিযোগ

হাতিয়া উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদককে শোকজ

১০

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে চবিতে মশাল মিছিল

১১

শহীদদের স্মরণে ববিতে দ্রোহের গান ও আজাদী সন্ধ্যা

১২

খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত

১৩

দেশকে নতুন করে সাজাতে হবে : ডিআইজি মঞ্জুর মোরশেদ

১৪

বনানীতে বিপুল পরিমাণ মদ জব্দ

১৫

দিনমজুরকে গলা কেটে হত্যা, ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

১৬

জাবিতে কোনো কমিটিই নেই, হত্যাকাণ্ড নিয়ে অপপ্রচার চলছে : ছাত্রদল

১৭

মোটরসাইকেলের ধাক্কায় প্রাণ গেল গৃহবধূর

১৮

সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান গ্রেপ্তার

১৯

দেশের ৩ অঞ্চলে হিট ওয়েভের শঙ্কা

২০
X