বাসের দীর্ঘ সারি না থাকলে হয়তো বোঝা যেত না এটি দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ও ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভার বাস টার্মিনাল। বলছি ঈশ্বরদীর একমাত্র ঐতিহ্যবাহী খায়রুজ্জামান বাবু বাস টার্মিনালের কথা। নির্মাণের আড়াই যুগ পার হলেও আধুনিকায়নের ছোঁয়া লাগেনি টার্মিনালটিতে।
সংস্কারের অভাবে পাবনা জেলার গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ঈশ্বরদীর একমাত্র ঐতিহ্যবাহী খায়রুজ্জামান বাবু বাস টার্মিনালটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। খানাখন্দ ও টার্মিনালের দুরবস্থার কারণে যেমন বাস পার্কিং করতে হচ্ছে কষ্টে, ফলে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও।
সরজমিনে দেখা যায়, টার্মিনাল ভবনের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। ছাদ ড্যামেজ, দেয়ালে ফাটল, ছাদের প্লাস্টার খসে রড বেরিয়ে গেছে, শৌচাগার ব্যবহারে অযোগ্য। দেয়াল ও ছাদের প্লাষ্টার খসে পড়ায় দীর্ঘদিন ধরে একমাত্র ক্যান্টিনও বন্ধ। টার্মিনাল ভবনের ভেতরে যাত্রীদের বসে থাকার পাকা বেঞ্চ থাকলেও আশপাশে ময়লা ও দুর্গন্ধে যাত্রীরা সেখানে কখনো আসে না। কিছু ভিক্ষুক ও মানসিক প্রতিবন্ধী এখানে দিনে ও রাতে থাকে। অপরদিকে জরাজীর্ণ যাত্রীছাউনি ও পরিত্যক্ত টয়লেটের কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।
বাস চলাচল ও যাত্রী সাধারণের সুবিধার্থে ১৯৯৫ সালের ১৯ জুলাই রেলওয়ে থেকে দুই একর জমি লিজ নিয়ে ১ কোটি ১ লাখ টাকা ব্যয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এই বাস টার্মিনাল নির্মাণ করে। পরে তারা এটি পৌরসভার কাছে হস্তান্তর করে। পৌর কর্তৃপক্ষ প্রয়াত পৌরসভার চেয়ারম্যান আলহাজ খারুজ্জামান বাবুর নামে এটির নামকরণ করেন খায়রুজ্জামান বাবু বাস টার্মিনাল। টার্মিনাল নির্মাণের কারণে ঈশ্বরদীর সঙ্গে পাবনা, ঢাকা, রাজশাহীসহ দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজতর হয়েছিল। কিন্তু সময়ের পরিক্রমা ও কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনার কারণে একমাত্র বাসস্ট্যান্ডটি এখন জনদুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দেশের সবচেয়ে বড় মেগা প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হওয়ার পর থেকে এ উপজেলায় চলাচলকারী গাড়ির চাপ আগের চেয়ে কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যাত্রীদের চাপও বেড়েছে অনেকখানি। প্রতিদিন দূরপাল্লা ও জেলার অভ্যন্তরীণ রুটে এ টার্মিনাল থেকে প্রায় ৭০টি বাসে ৩ থেকে ৪ হাজার যাত্রী যাতায়াত করছে।
কিন্তু সংস্কারের অভাবে টার্মিনাল ভবন ও পার্কিংয়ের জায়গা জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় বৃষ্টির পানি জমে যাত্রী ভোগান্তি এখন চরমে। জমে থাকা কাদা ও পানির কারণে পা পিছলে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। বাসস্ট্যান্ডে নেই টয়লেট ও যাত্রী বিশ্রামাগার। ফলে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছেন চলাচলকারী সাধারণ যাত্রীরা।
যাত্রী আলমগীর হোসেন বলেন, ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভার একমাত্র বাস টার্মিনালটির এমন অব্যবস্থাপানা কি কারোই চোখ পড়ে না। মানুষ কত কষ্ট করে যাতায়াত করছে, বউ-বাচ্চা নিয়ে যাতায়াত করা তো অসম্ভব। এই যে আমি টার্মিনালে এসে নামলাম, এখন আমাকে জুতা খুলে প্যান্ট ওপরে তুলে তারপর টার্মিনাল থেকে বের হতে হবে। পুরো টার্মিনালে যে কাদা এর চেয়ে তো গ্রামের রাস্তাও ভালো।
পাবনা জেলা মটর মালিক সমিতি ঈশ্বরদী শাখার সিনিয়র সহসাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক বলেন, টার্মিনালে খানাখন্দের কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে। অধিকাংশ সলিং নষ্ট হয়ে গেছে। বৃষ্টির পানি জমলেই কাদামাটিতে ভরে যায় জায়গাটি। ফলে কষ্ট করে যাত্রীদের ওঠানামা করতে হয়। আমরা এখন নিরুপায়, পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের আবেদন টার্মিনালটি যেন দ্রুত সংস্কার করা হয়।
ঈশ্বরদী সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি আসাদুর রহমান বিরু বলেন, বাস টার্মিনালটি উদ্বোধনের পর ২৮ বছর পেরিয়েছে কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সংস্কার করা হয়নি, এতে যাত্রী ভোগান্তি বেড়েছে। ঈশ্বরদীর মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় একটি আধুনিক বাস টার্মিনাল হবে এটি এখন সময়ের দাবি।
ঈশ্বরদী পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার বিশ্বাস জানান, ২০০৭-০৮ সালে টার্মিনাল ভবনের ছাদ ড্যামেজ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে ছাদে প্যাটেন স্টোন ঢালাই দেওয়া হয়। সে সময় যাত্রীদের বসার জন্য বেশ কয়েকটি পাকা বেঞ্চ নির্মাণ করা হয়। অর্থ বরাদ্দ না থাকায় পরবর্তীতে আর কোনো সংস্কারকাজ করা সম্ভব হয়নি।
বর্তমান পৌর মেয়র ইসাহক আলী মালিথা বলেন, টার্মিনালটি পৌর সভার নিজস্ব জায়গা না। সে সময় রেলওয়ে জমি লিজ নিয়ে টার্মিনাল করা হয়েছিল। পৌরসভার উন্নয়ন প্রকল্প পেতে হলে নিজস্ব সম্পত্তিতে প্রতিষ্ঠানটি হতে হয়। তারপরও যাত্রী ভোগান্তি যেন না হয় সে জন্য পৌরসভার পক্ষ থেকে দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন