ছয় দফা দাবি আদায়ে সারা দেশে ‘শাটডাউন’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ইনস্টিটিউট তালাবদ্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে নেন। পরে তারা দাবির সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন।
শাটডাউন কর্মসূচির কারণে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে সকাল থেকে ক্লাস-পরীক্ষাসহ কোনো কার্যক্রম হয়নি।
শিক্ষার্থীরা জানান, ‘ছয় দফা দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত শাটডাউন কর্মসূচি চলবে। এটা আমাদের ক্যাম্পাস। এখান থেকে আমরা যাব না। আর কোনো আশ্বাস শুনতে চাই না। দাবি মেনে নেওয়ার সুনির্দিষ্ট ঘোষণা চাই। তা না হলে আমাদের আন্দোলন কোটাবিরোধী আন্দোলনের চেয়েও কঠোর হবে।’
‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা’ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা ও ‘কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠনসহ ছয় দফা দাবিতে গত কিছুদিন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবিগুলো হলো- জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল করতে হবে। ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।
দ্বিতীয় দাবি, ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যে কোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিল করতে হবে। উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম চালু করতে হবে এবং একাডেমিক কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে ইংরেজি মাধ্যমে করতে হবে।
তৃতীয় দাবি, উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রীয়, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
চতুর্থ দাবি, কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পদে কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোয় অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ ও সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।
পঞ্চম দাবি, স্বতন্ত্র ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা’ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা ও ‘কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন করতে হবে।
ষষ্ঠ দাবি, পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নতমানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সারা দেশে পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা এপ্রিলের শুরু থেকে বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে আসছেন। এ অবস্থায় তাদের দাবি বাস্তবায়নের রূপরেখা প্রণয়নে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করলে গত ২২ এপ্রিল তারা আন্দোলন স্থগিত করে। তবে পরদিনই সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।
মন্তব্য করুন