চলতি বোরো ধান কাটার মৌসুমে শ্রমিক সংকটের কারণে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় বাড়তি মজুরি দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না শ্রমিক। এতে মাঠভর্তি পাকা ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।
কৃষকরা বলছেন, অন্যান্য মৌসুমের তুলনায় এ মৌসুমে বাইরে হতে আসা শ্রমিকের সংখ্যা কম। মাঠের সব ধান একসঙ্গে পেকে যাওয়ায় শ্রমিকের চাহিদা বেড়েছে। চাহিদা অনুযায়ী শ্রমিক না থাকায় শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। সময়মতো ফসল ঘরে তুলতে না পারলে ভারি বৃষ্টিপাত হলে লোকসানও গুনতে হতে পারে তাদের।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ইরি-বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ হাজার ৫৭১ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ইরি-বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৬৯ হেক্টর জমিতে। সময়মতো সেচের পানি পাওয়ায় ও ভালো পরিচর্যায় এবার বোরোর ফলন ভালো হয়েছে। এখন মাঠে মাঠে পাকা ধান। আবাদ করা জমির অর্ধেকের বেশি ধান কাটা হয়ে গেছে। অবশিষ্ট পাকা ধান এখনও মাঠে রয়েছে। এরই মধ্যে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। কোনো কোনো কৃষক শ্রমিকদের বাড়তি পারিশ্রমিক দিয়ে পাকা ধান ঘরে তুলছেন।
সরেজমিনে উপজেলার কয়েকটি ফসলি মাঠে ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বোরো ধান কাটার মৌসুমের প্রথমদিকে শ্রমিকের সংকট ছিল না। তখন শ্রমিকের মজুরি ছিল ৮০০ টাকা। প্রথমদিকে কিছু কিছু জমির ধান কাটার উপযোগী হয়েছিল। তবে বর্তমানে মাঠের সব ধান একসঙ্গে পাকার কারণে শ্রমিকের চাহিদা বেড়েছে। শ্রমিকের চাহিদা বাড়ায় বেড়েছে মজুরিও। শ্রমিকের সংখ্যা কম থাকায় বাড়তি মজুরি দিয়েও চাহিদা অনুযায়ী পাওয়া যাচ্ছে না শ্রমিক। মৌসুম শুরুর মজুরি ৮০০ টাকা হলেও বর্তমানে ১২০০ টাকা মজুরি দিতে হচ্ছে শ্রমিকদের। বাড়তি মজুরি দিয়েও মিলছে পর্যাপ্ত শ্রমিক। শ্রমিকের অপেক্ষায় থেকে পাকা ধান নষ্ট হচ্ছে কোনো কোনো কৃষকের। ভারি বৃষ্টি হলে তাদের লোকসান গুনতে হবে। তাই কোনো কোনো কৃষক বাধ্য হয়েই পরিবার পরিজন নিয়ে ধান কাটছেন।
কৃষক আবুল কালাম বলেন, বড়ধুশিয়ার শ্রমবাজার থেকে চারজন শ্রমিক এনেছি। আমার চাহিদা ছিল আট জনের, কিন্তু পাইনি। তাদেরকে চড়া দামে এনেছি। কিছু জমির ধান আগেই পেকে গিয়ে ছিল। তখন শ্রমিকের এত চাহিদা ছিল না। এখন মাঠের সব ধান একসঙ্গে পাকায় চাহিদা বেড়েছে শ্রমিকের। এ জন্য শ্রমিক সংকটের মতো সমস্যা দেখা দিয়েছে। শ্রমিকের মজুরিও বেড়ে গেছে।
মো. ইউনুস মিয়া নামে একজন কৃষক বলেন, সব ধান একসঙ্গে পেকে যাওয়ায় শ্রমিকের চাহিদা বেড়েছে। চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে মজুরিও বেড়েছে। তবুও প্রয়োজন মতো শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। শ্রমিক না পেয়ে বাধ্য হয়ে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে পরিবারের সবাই মিলে ধান কাটছি।
কৃষক হিমন মিয়া বলেন, শ্রমিকের মজুরি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। তবুও পর্যাপ্ত শ্রমিক মিলছে না। এদিকে বৃষ্টি বেশি হলে ধান ঘরে তুলতে সমস্যায় পড়তে হবে। এ নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। আকাশে মেঘ জমলেই চিন্তায় পড়ে যাই। আজকেও কিছুসময় বৃষ্টি হয়েছে। যদি টানা বৃষ্টি হয় আর রোদ না থাকে তাহলে পাকা ধান নিয়ে সমস্যায় পড়তে হবে আমাদের।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মাসুদ রানা কালবেলাকে বলেন, এ উপজেলায় অর্ধেকের বেশি বোরো ধান কাটা হয়ে গেছে। এখনও মাঠে অবশিষ্ট পাকা ধান রয়ে গেছে। বোরো ধানকাটার মৌসুমে শ্রমিকের চাহিদা বেশি থাকায় বাড়তি মজুরি দিয়ে শ্রমিক নিচ্ছেন কৃষকরা।
তিনি বলেন, ধানকাটার ক্ষেত্রে কম্বাইন হারভেস্টার ব্যবহার করলে কৃষক ভাইদের প্রায় ৬০ শতাংশ খরচ কমবে। আমরা উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের সবসময় পরামর্শ দিয়ে আসছি শ্রমিকের ওপর পুরোপুরি নির্ভর না করে কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে ধান কাটার জন্য। এ বছর উপজেলার অনেক কৃষক এ পরামর্শ মেনে কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে ধান কাটছেন। তবে চলমান শ্রমিক সংকট সমস্যার সমাধান করা হবে।
মন্তব্য করুন