সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদকে শোকজ করেছেন আদালত। নিয়ম না মেনে জালালাবাদ অন্ধ কল্যাণ সমিতির এডহক কমিটি গঠন এবং হিসাব পরিচালনার একটি অভিযোগের শুনানি শেষে আদালত কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন।
সিলেটের যুগ্ম জেলা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক রশিদ আহমদ মিলন বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) এ আদেশ দেন বলে জানিয়েছেন মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী বেদানন্দ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশের (শোকজ) জবাব দিতে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার আদেশ দেওয়া হলেও সোমবার (২৮ এপ্রিল) বিষয়টি জানাজানি হয়।
জালালাবাদ অন্ধ কল্যাণ সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আহমদ সিদ্দিকী জেলা প্রশাসকসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। জেলা প্রশাসক পদাধিকার বলে জালালাবাদ অন্ধ কল্যাণ সমিতির সভাপতি। এ সমিতির অধীনেই জালালাবাদ চক্ষু হাসপাতাল পরিচালিত হয়।
মামলায় বিবাদীরা হলেন, সিলেটের জেলা প্রশাসক ও জালালাবাদ অন্ধ কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও সমিতির সহসভাপতি মো. আনোয়ারুজ্জামান। এ ছাড়া মামলায় বিভাগীয় কমিশনার, রূপালী ব্যাংকের ইসলামপুর করপোরেট শাখার ব্যবস্থাপক, সিলেটের সিভিল সার্জন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক, সিলেট বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রক, সুবিদবাজার এলাকার মৃত গোলাম রাব্বানী চৌধুরীর ছেলে মাহবুব ছোবহান চৌধুরী, অ্যাডভোকেট কাওছার আহমদ ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও সহকারী কমিশনারকে বিবাদী করা হয়েছে।
মামলায় বাদীপক্ষ বলেছেন, ১৯৬৪ সালে গঠিত জালালাবাদ অন্ধ কল্যাণ সমিতি একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। গঠনতন্ত্রের ১৩ নম্বর অনুচ্ছেদে সভাপতির নির্দিষ্ট দায়িত্ব-কর্তব্য সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। সমিতির বর্তমান কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় নতুন কার্যকরী কমিটি গঠনের লক্ষ্যে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর সমিতির সম্মেলন কক্ষে সাধারণ সভা আহ্বান করেন।
কিন্তু সভায় কোরাম পূর্ণ না হওয়ায় কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব হয়নি। তাই বিধি মোতাবেক সভা মুলতবি করা হয়। কিন্তু সমিতির সহসভাপতি ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ারুজ্জামান জেলা প্রশাসককে সভাপতি ও মামলার বিবাদী কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তাকে সদস্য করে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে প্রচার করেন। এ ছাড়া নিয়ম না মেনে জেলা প্রশাসক চেকে স্বাক্ষর করে অর্থ উত্তোলন করেছেন বলে মামলায় বলা হয়েছে।
মামলার বাদী জালালাবাদ অন্ধ কল্যাণ সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আহমদ সিদ্দিকী বলেন, জেলা প্রশাসক আমাদের এজিএমে উপস্থিত হয়ে বলেন মিটিংয়ে মানুষ কম। এটার এডহক কমিটি গঠন করা হবে। নতুন করে অডিট করা হবে। আমরা বলেছি, এডহক কমিটি গঠনের কোনো নিয়ম নেই সমিতির সংবিধানে। অডিট করাতে পারেন, ভালো একটি প্রতিষ্ঠান দিয়ে। প্রতি বছর সমিতির অডিট হয়।
প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন জনের সাহায্য-সহযোগিতায় চলে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, তারপর এডহক কমিটি গঠন করে তিনটি চেকে প্রতিষ্ঠানের এফডিআর থেকে টাকা উঠানো হয়েছে। জেলা প্রশাসক চেকে স্বাক্ষর করেছেন। কত টাকা উঠানো হয়েছে তা জানি না। একটি সুন্দর প্রতিষ্ঠান নষ্ট হয়ে যাবে এভাবে চললে। এটি সিলেটের সেবামূলক প্রতিষ্ঠান।
বাদীপক্ষের আইনজীবী বেদানন্দ ভট্টাচার্য বলেন, মামলায় সমিতির সভাপতি ও সিলেটের জেলা প্রশাসক নির্দিষ্ট দায়িত্ব বহির্ভূত কোনো কার্যক্রম দ্বারা সমিতি পরিচালনা, তহবিল বা স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিষয়ে কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করতে না পারেন, সে ব্যাপারে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশসহ অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারির আবেদন করলে আদালত তা আমলে নিয়ে বাদীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন।
সিলেট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, বিষয়টি আজকে শুনেছি। আদালতের কপি এখনও পাইনি। আমরা জালালাবাদ অন্ধ কল্যাণ সমিতির বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে তদন্ত করছি। তদন্ত শেষ হলে সাংবাদিকদের জানানো হবে।
মন্তব্য করুন