কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চাঁদা তুলে অফিস কক্ষ সংস্কারের অভিযোগ উঠেছে। আর সেই চাঁদার টাকা তুলে দিয়েছেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক। গত সপ্তাহে এমনটা ঘটেছে।
অভিযুক্ত মোহাম্মদ হায়াতুন্নবী মুরাদনগর উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। অন্যদিকে চাঁদা তুলে দেওয়ার অভিযোগ মুরাদনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাকির হোসেন মীরের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, উপজেলার ২২টি ইউনিয়নে ২০৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। সেখান থেকে ৪টি ইউনিয়নের দুইটি ক্লাস্টারে ৪৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দায়িত্বে আছেন সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ হায়াতুন্নবী। এক সপ্তাহ আগে তিনি মুরাদনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও পাজিরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ জাকির হোসেন মীরকে অফিস কক্ষ সংস্কারের বিষয়টি জানান। পরে শিক্ষক জাকির হোসেনের পরামর্শে শিক্ষা কর্মকর্তার অধীনে থাকা ২টি ক্লাস্টারের ৪৫টি বিদ্যালয় থেকে ৫০০ টাকা করে মোট ২২ হাজার ৫০০ টাকা চাঁদা সংগ্রহ করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে পাজিরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ জাকির হোসেন মীরকে মোবাইলে একাধিকবার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
সোনাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান টাকা দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আগের স্যারেরাও অফিসের রুম সংস্কারের কথা বলে টাকা নিয়েছেন, এটা নতুন কিছু না। ওইদিনও হায়াতুন্নবী স্যার আমাদেরকে ডেকে উনার অফিস রুমটা দেখিয়ে বলল রুমটার অনেক দিক দিয়ে ফেটে গেছে, কি করা যায়। তখন স্যারের মন রাখতে গিয়ে আমরা নিজেদের পকেট থেকে সবাই ৫০০ টাকা করে দিয়েছি।
ভাংগানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহিউদ্দিন আহম্মদ বলেন, আমরা আমাদের ব্যক্তিগত পকেট থেকে টাকাটা দিয়েছি। বিদ্যালয়ের কোনো ফান্ড থেকে না। আর এই টাকা আমাদের কাছ থেকে নিয়েছেন জাকির হোসেন মীর ও লুৎফুর রহমান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, এর নেপথ্য কারণ হলো বিদ্যালয় ফাঁকি দেয়া! টাকা দেওয়ার ফলে শিক্ষা কর্মকর্তার সহযোগিতায় শিক্ষকরা বিভিন্ন অজুহাতে বিদ্যালয় ফাঁকি দিতে পারবে।
অভিযুক্ত সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ হায়াতুন্নবী বলেন, শিক্ষকদের কাছে আমার কোন ডিমান্ড ছিল না। তারা গত বছরও অফিসের একটি রুম সংস্কার করে দিয়েছে। এইবার টিচাররা বলছে স্যার আপনাদের একটা রুম আমরা সংস্কার করে দেব। ওই হিসাবে টিচাররা করছে। আর রুম সংস্কারের কাজও আমি করিনি। সেটা টিচাররাই দপ্তরিদের মাধ্যমে করেছে।
মুরাদনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমি দেখেছি রুমের কিছু একটা কাজ করছে তারা। আমি ভেবেছি হয়ত হায়াতুন্নবী সাহেব তার নিজের টাকা দিয়েই কাজ করছেন। শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। আর উনি টাকা চাইতে পারেন না, উনি কোনোভাবেই টাকা কালেকশন করতে পারেন না। যদি এমন কিছু হয়ে থাকে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কুমিল্লা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাপস কুমার পাল বলেন, টাকা দেওয়া এবং নেওয়া দুইটাই তো অপরাধ। এখানে শিক্ষকরা হয়তো টাকা দিয়েছে সুবিধা নেয়ার জন্য। আর কর্মকর্তা টাকা নিয়েছে সুবিধা দেওয়ার জন্য। অভিযোগ পেলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন