জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক (উত্তর অঞ্চল) সারজিস আলম বলেছেন, আমরা পুরো বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আমাদের বোন লামিয়ার কাছে লজ্জিত। কারণ অভ্যুত্থানে শহীদ আমাদের একজন সহযোদ্ধা ভাইয়ের মেয়েকে কিছু নরপিশাচের হাত থেকে আমাদের বোনকে রক্ষা করতে পারিনি। এমন ঘটনাগুলোর আর কোনো দিনই পুনরাবৃত্তি চাই না।
রোববার (২৭ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার পাঙ্গাশিয়া নেছারিয়া মাদ্রাসা মাঠে আলগি গ্রামের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ জসিম উদ্দিনের মেয়ে কলেজছাত্রী লামিয়ার জানাজার আগে তিনি এসব কথা বলেন।
আগামী ৯০ দিনের মধ্যে ধর্ষণকারীদের প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আলটিমেটাম দিয়ে সারজিস আলম বলেন, যদি প্রকাশ্যে সম্ভব নাও হয় তাহলে অন্তত তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের চিত্র জনসম্মুখে প্রকাশ করা হউক, যাতে করে ভবিষ্যতে এমন জঘন্য কাজ আর কেউ করার সাহস না পায়।
এর আগে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার শহীদ কন্যা লামিয়ার মরদেহ ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে সন্ধ্যা নাগাদ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে স্বজন ও এলাকাবাসীর কান্নায় পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় পাঙ্গাশিয়া নেছারিয়া মাদ্রাসা মাঠে জানাজা শেষে শহীদ বাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
লামিয়ার জানাজায় কেন্দ্রীয় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কাবির রিজভী, গণ অধিকার পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির উচ্চতর সদস্য কৃষিবিদ শহীদুল ইসলাম ফাহিম, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুর রশিদ চুন্নু মিয়া, সদস্য সচিব স্নেহাংসু সরকার কুট্টি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পটুয়াখালী জেলা আমির অ্যাডভোকেট নাজমুল হোসেন, উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. খলিলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম মৃধাসহ কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতারাসহ হাজারো মানুষের ঢল নামে। জানাজায় অংশ নেওয়া এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় লামিয়ার সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলার আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় শহীদ কন্যা কলেজছাত্রী লামিয়া (১৭) নিজ বাড়ি থেকে পাশের গ্রামে নানার বাড়ি যাওয়ার পথে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়। ঘটনার পরদিন ১৯ মার্চ লামিয়া নিজেই বাদী হয়ে ২ জনকে আসামি করে দুমকি থানায় একটি মামলা করেন। পুলিশ অভিযুক্ত সাকিব মুন্সী ও সিফাত মুন্সীকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠান।
এ ঘটনায় লোকলজ্জা ও সামাজিক নানা চাপে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়লে মায়ের সঙ্গে ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার শেখেরটেকে ভাড়া বাসায় চলে যান। গত শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। তাকে উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত সাড়ে ১০টায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মন্তব্য করুন