বরগুনার তালতলীতে এক কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ইব্রাহিমসহ তার চার বন্ধুর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবার গত ৫ দিন ধরে থানায় গেলেও সাধারণ ডায়েরি (জিডি) না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওসি মোহাম্মদ শাহজালালের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, উপজেলার নিশানাবাড়ি ইউনিয়নের তাঁতিপাড়া এলাকার বশিরের স্ত্রী রিনা বেগম তার আত্মীয় ইব্রাহিম নামে এক যুবকের সঙ্গে ভুক্তভোগী কিশোরীকে বিয়ের জন্য প্রস্তাব দেয়। এর প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) রাতে রিনা বেগমের বাড়িতে ভুক্তভোগী কিশোরী ও তার মাকে ডাকা হয়।
এ সময় মায়ের অজান্তে ভুক্তভোগী কিশোরীকে প্রলোভন দেখিয়ে ইব্রাহিমের মোটরসাইকেলে তুলে দেন রিনা বেগম। ইব্রাহিম ওই কিশোরীকে নিয়ে রাত ১০টার দিকে উপজেলার নকরী খেয়াঘাটে নিয়ে যায়।
সেখানে একটি মাছের ঘেরে নিয়ে কিশোরীকে রাতভর সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করেন ইব্রাহিমসহ তার চার অজ্ঞাত বন্ধু। পরে সকালে গাড়ি ভাড়া দিয়ে কিশোরীকে চলে যেতে বলেন।
তখন কিশোরী ইব্রাহিমকে বিয়ের কথা বললে তিনি বলেন, ‘তোকে বিয়ের জন্য আনা হয়নি। তোকে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে নিয়ে আসা হয়েছে।’ এই বলে ইব্রাহিমসহ তার বন্ধুরা পালিয়ে যায়।
এদিকে মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার পরে বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে ওই রাতেই ভুক্তভোগী পরিবার থানায় যায়। থানা থেকে বলা হয়, সকালে যেতে। কিশোরীর খোঁজ মিললে তাকে নিয়ে ফের থানায় যায় পরিবার। তবে এ ঘটনায় থানার ওসি মো. শাহজালাল জিডি না নিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারকে ধর্ষণের আলামত সংরক্ষণ রাখতে বলে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।
ভুক্তভোগী কিশোরী বলেন, ‘ইব্রাহিমের সঙ্গে আগে দেখা বা পরিচয় ছিল না। বাড়ির পাশের রিনা ভাবি আমাকে বিয়ের প্রস্তাবসহ বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে রাতে ওই ছেলের সঙ্গে পাঠিয়ে দেন। আমাকে নিয়ে ইব্রাহিমসহ তার চার বন্ধু রাতভর ধর্ষণ করেন।’
সকালে আমি ইব্রাহিমকে বিয়ের কথা বললে তিনি বলেন, ‘তোকে তোর ভাবির কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকায় ক্রয় করে এনেছি। তোকে বিয়ে করব কেন?’
এই বলে আমাকে বাড়িতে যাওয়ার জন্য ২০০ টাকা ভাড়া দিয়ে ফেলে রেখে চলে যান তারা।
ভুক্তভোগী কিশোরীর বাবা বলেন, আমি মেয়েকে পেয়ে ইউপি সদস্য শাকিল খানসহ কয়েকবার থানায় যাই। মেয়ে বিস্তারিত ঘটনা পুলিশকে জানায়। তবে ওসি সাহেব কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে আমাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। আমরা জিডি করতে চাইলেও নানা অজুহাত দেখান ও ইব্রাহিমকে থানায় ডাকার কথা বলেন। আমার মেয়ের সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে তার বিচার চাই।
এ ঘটনার পর থেকে রিনা বেগম পলাতক রয়েছেন।
ইউপি সদস্য শাকিল খান বলেন, ঘটনার বিষয়টি শুনে ওই মেয়ের পরিবারের সঙ্গে আমিও থানায় যাই। তবে অভিযুক্ত ছেলের সঠিক পরিচয় না পেয়ে জিডি নেয়নি পুলিশ।
তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহজালালের কাছে ধর্ষণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো লিখিত অভিযোগ বা বক্তব্য পাইনি। নিখোঁজের বিষয়ে একটা তথ্য পেয়েছিলাম। পরে তাদের জিডি করার জন্য ছবিসহ আসতে বলেছিলাম। পরে তারা এসেছিলেন। তখন তারা মেয়েকে পাওয়া গেছে বলে জানায়।
বরগুনার পুলিশ সুপার মো. ইব্রাহিম খলিল বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। ঘটনার সত্যতা পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন