দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় শুরু হয়েছে ২০০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী বুড়া চিন্তামন ঘোড়ার মেলা। শনিবার (২৬ এপ্রিল) উপজেলার মেলাবাড়ী মাঠে পক্ষকালব্যাপী এ মেলার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়।
মেলা কমিটির সভাপতি মো. আফতাবুজ্জামানের সভাপতিত্বে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহম্মেদ চৌধুরী খোকন। জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ফুলবাড়ী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহাজুল ইসলাম, ফুলবাড়ী থানার ওসি একেএম খন্দকার মহিব্বুল প্রমুখ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
পৌর বিএনপির প্রচার সম্পাদক সাইদুর রহমান, পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জামান সরকার, আলাদিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম, ইউনিয়ন যুবদলের হাফিজুর রহমান হাফিজ, মেলার ইজারাদার শফিকুল ইসলাম শফি প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ঘোড়ার মেলাকে কেন্দ্র করে মেলাবাড়ী এলাকাজুড়ে বসেছে গ্রামীণ মেলা। মেলায় আগতদের বিনোদনের জন্য দোলনা, নাগরদোলা, সার্কাস, গ্রামীণ বিভিন্ন খাবার দোকান ও খেলাধুলার আয়োজন রয়েছে। মেলায় সব বয়সী নারী-পুরুষের ব্যাপক সমাগম ঘটেছে। মেলায় আগত ব্যবসায়ীদের ঘোড়ার অংশগ্রহণে ঘোড়দৌড় অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঘোড়দৌড় দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসেন নানা বয়সী নারী-পুরুষ।
দিনাজপুরের বিরামপুরের ভগবতীপুর গ্রামের ঘোড়া ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম বলেন, ১৯৯৪ সাল থেকে বুড়া চিন্তামন ঘোড়ার মেলায় ঘোড়া বেচাবিক্রি করে আসছেন। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে মেলায় দুটি ঘোড়া তুলেছেন। দাম ৪৫ থেকে ৫০ হাজার রাখলেও ক্রেতারা দাম বলছেন ১৫ থেকে ২০ হাজার। কিন্তু ৫০ হাজারের কম হলে ঘোড়া দুটি বাড়িতে ফেরত নিয়ে যাবেন।
নওগাঁর ধামইরহাট সদরের বাসিন্দা শামসুল আলম বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মেলায় বিক্রির জন্য ছোটবড় ৭টি ঘোড়া এনেছি। আকারভেদে দাম ৭ থেকে ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু ক্রেতারা ৫ থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে দাম বলছেন। এখন পর্যন্ত একটি ঘোড়াও বিক্রি করতে পারিনি। ১৯৯০ সাল থেকে এই মেলায় ঘোড়া বেচাবিক্রি করে আসছি।
বিরামপুরের দিওর বটতলী শৌলাহার গ্রামের আছমান আলী বলেন, ১৯৮৫ সাল থেকে এই বুড়া চিন্তামন ঘোড়ার মেলায় আসছেন। গত শুক্রবার সকালে মেলায় একটি ঘোড়া এনেছেন। দাম হেঁকেছেন দেড় লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত ক্রেতারা দাম বলেছেন ৮৫ হাজার টাকা। এক লাখের ওপরে দাম হলে বিক্রি করবেন। না হলে বাড়িতে ফেরত নিয়ে যাবেন।
হাকিমপুরের হিলি ডাঙ্গাপাড়া এলাকার আব্দুল কাহের বলেন, দীর্ঘ ৫৩ বছর ধরে এই মেলায় ঘোড়ার ব্যবসা করে আসছি। এ বছর দুটি ঘোড়া মেলায় তুলেছি। দাম রেখেছেন ৫০ হাজার টাকা। এর মধ্যে একটি ঘোড়া ১৮ হাজার টাকায় বিক্রিও করে দিয়েছেন। অন্যটি বিক্রির অপেক্ষায় মেলায় পড়ে আছেন।
আলাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান দছিম উদ্দিন মণ্ডল বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই বুড়া চিন্তামন ঘোড়ার মেলাটি দেশব্যাপী ব্যাপক পরিচিত। ঘোড়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই এই মেলা শুরু এবং শেষ হওয়ার তারিখ জানেন। এ কারণে প্রতি বছর মেলা শুরুর আগ থেকেই ঘোড়া বেচাকেনা করতে আসেন সবাই। প্রতি বছর বৈশাখ মাসে মেলাটি অনুষ্ঠিত হয়।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহম্মেদ চৌধুরী খোকন বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড়ার মেলাকে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসররা ধ্বংস করে দিয়েছে। এবারই প্রথম এলাকার সর্বস্তরের মানুষ মুক্তমনে মেলা উপভোগ করছেন। এ মেলার ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
ওসি একেএম খন্দকার মহিব্বুল বলেন, এটি ঐতিহ্যবাহী ঘোড়ার মেলা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঘোড়া ব্যবসায়ীরা এসেছেন। মেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ সদস্যরা নজরদারি রাখছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইসাহাক আলী বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে অনুমোদনপ্রাপ্ত এই ঘোড়ার মেলায় উপজেলা প্রশাসন থেকে সার্বিক নজরদারি রয়েছে। যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন