দরিদ্র ঘরের সন্তান পলাশ মিয়া (৩০)। স্থানীয় এক দালালের মাধ্যমে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন ভাগ্য পরিবর্তনের আশায়। কিন্তু সেখানে গিয়ে ভাগ্য তো পরিবর্তন হয়নি বরং উল্টো গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে নিজের জীবন বিসর্জন দিতে হয়েছে তাকে। এখন তার লাশ দেশে আনা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। পরিবারের দাবি, পলাশের লাশটা যেন অন্তত দেশে আনার ব্যবস্থা করা হয়।
একইসঙ্গে ওই দালালকে দুষছেন পরিবার। এ ঘটনায় তার বিচার দাবি করেছেন স্বজনরা।
সৌদি প্রবাসী পলাশ মিয়া নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের কাউরাট ইটাচকি গ্রামের মৃত তোতা মিয়ার ছেলে।
স্বজনরা জানান, পলাশ মিয়ার পরিবারের লোকজন নিজেদের সহায়-সম্বল বিক্রি করে এবং মানুষের কাছ থেকে টাকা-পয়সা ধারদেনা করে প্রায় ৯ মাস আগে ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে স্থানীয় এক দালালের মাধ্যমে সৌদি আরব পাঠিয়েছিল ভাগ্য পরিবর্তনের আশায়। দালাল ভালো চাকরি দেবে এবং ভালো টাকা বেতন দেবে বলে সৌদি আরব পাঠায়।
কিন্তু পলাশের ভাগ্যে ঘটেছে উল্টো ঘটনা। পলাশ সৌদি আরবে গিয়েছে ঠিকই কিন্তু দালালের কথা মতো কাজ পায়নি। বেতনও পায়নি ঠিকমতো। দালাল বলেছিল, সেখানে যাওয়ার পর তাকে দেওয়া হবে বৈধ কাগজপত্র, তাও দেওয়া হয়নি।
এছাড়া মানুষের কাছ থেকে ধারদেনা করে টাকা সংগ্রহ করে বিদেশে যাওয়ার টাকার চাপও ছিল। সব মিলিয়ে নানা যন্ত্রণা মাথায় নিয়ে রোগে-শোকে ভুগে অবশেষে বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) সৌদি আরবের রাতের কোনো এক সময় গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন পলাশ। এই খবর গত শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) রাতে পলাশের গ্রামের বাড়িতে পৌঁছলে শোকের মাতম শুরু হয়। গ্রামবাসীর মাঝে নেমে আসে শোকের ছায়া।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিনে গেলে কথা হয় পলাশ মিয়ার মা সেলিনা আক্তার, বোন কামরুন্নাহারসহ স্বজনদের সঙ্গে। তারা অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় দালাল নওপাড়া ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামের প্রণয় সাহা ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে পলাশ মিয়াকে সৌদি পাঠায়। দালাল বলেছিল, পলাশ মিয়াকে ভালো বেতন দেওয়া হবে। আর বিদেশে যাওয়ার পর তাকে দেওয়া হবে বৈধ কাগজপত্র। কিন্তু কোনো কিছু দেয়নি। আমরা দালাল প্রণয় সাহার সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করেছি। সে বলেছে, এই তো সামনের মাসে সবকিছু ঠিক করে দেওয়া হবে। কিন্তু কোনো কিছুই দেয়নি। অবশেষে আমাদের পলাশ টাকার অভাবে না খেয়ে রোগে-শোকে ভুগে আত্মহত্যা করেছে।
পলাশের মা সেলিনা আক্তার বিলাপ করতে করতে বলেন, অনেক স্বপ্ন ছিল, আমার পুত বিদেশে গিয়া টাকা-পয়সা পাঠাইবো। কিন্তু দালালের কারণে আমার সব কিছু শেষ। আমি আমার পুতের লাশটা চাই। আর দালালের বিচার চাই।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত দালাল প্রণয় সাহা বলেন, পলাশকে বৈধ ভিসার মাধ্যমেই সৌদি পাঠানো হয় এবং প্রথমে তিন মাসের আকামাও করে দেওয়া হয়েছিল। পরে কোম্পানির আইডি ব্লক হয়ে যাওয়ায় আকামা আর রিনিউ করা যায়নি। সেখানে সে কাজ করে ৬ মাসের বেতন পেয়েছে। দুই মাসের বেতন বকেয়া আছে। আমার সঙ্গে পলাশের নিয়মিতই যোগাযোগ ছিল। সে সৌদি আরবে যাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়ে। কয়েকবার চিকিৎসাও করে। পলাশের আত্মহত্যার জন্য তিনি দায়ী নয় বলেও দাবি করেন।
কেন্দুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান কালবেলাকে বলেন, এ ঘটনায় থানায় কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন