বার্ষিক সিটি গভর্ন্যান্স মূল্যায়নে চলতি অর্থবছরে দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের মধ্যে দেশসেরা হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। স্থানীয় সরকার বিভাগ সাংগঠনিক দক্ষতা, আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও নাগরিক সম্পৃক্ততাসহ ১৫ ক্যাটাগরিতে মূল্যায়ন করে এ ফলাফল নির্ধারণ করেছে।
এ মূল্যায়নে গত বছর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। চলতি অর্থবছরের মূল্যায়নে সর্বনিম্ন অবস্থানে আছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। সম্প্রতি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ উপসচিব মো. ফিরোজ মাহমুদ স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়েছে, গত অর্থবছর ২৩টি সূচকের ওপর ভিত্তি করে সিটি গভর্ন্যান্স মূল্যায়ন করা হয়। চলতি অর্থবছর নির্ধারিত সূচক ছিল ১৫টি। গত ২৬ ও ২৭ ফেব্রুয়ারি সূচকগুলোর ওপর ভিত্তি করে সিটি গভর্ন্যান্স মূল্যায়ন করা হয়। প্রথম বার্ষিক সিটি গভর্ন্যান্স মূল্যায়নে চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন যৌথভাবে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে, যা নিঃসন্দেহে গর্বের ও প্রশংসনীয়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কঠোর পরিশ্রম ও আন্তরিকতার জন্য এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। ১৫টি সূচকের আলোকে পরিচালিত দ্বিতীয় সিটি গভর্ন্যান্স মূল্যায়নে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন প্রথম স্থান অর্জন করে, যা ধারাবাহিক উন্নয়নের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
চসিকের এ সাফল্য অর্জনে যারা নিরলস পরিশ্রম, দায়িত্ববোধ ও আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করেছেন তাদের অভিনন্দন জানানো হয়। এ ছাড়া বলা হয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রতি বছরই সিটি গভর্ন্যান্স মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করবে এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন শ্রেষ্ঠত্বের স্থান অক্ষুণ্ন রাখবে ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সিটি গভর্ন্যান্স মূল্যায়ন করা হয় ১০০ নম্বরে। এতে চসিক পেয়েছে ৯০। মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ১৫টি সূচককে তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে মূল্যায়ন করা হয়। এর মধ্যে ৫টি সূচক নিয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রমে নম্বর ৩০। এছাড়া ছয়টি সূচক নিয়ে গঠিত আর্থিক ব্যবস্থাপনায় ৪০ নম্বর ও চারটি সূচক নিয়ে গঠিত নাগরিক সম্পৃক্ততা মূল্যায়ন করা হয় ৩০ নম্বরে। চসিক সাংগঠনিক কার্যক্রমে ২৩ নম্বর, আর্থিক ব্যবস্থাপনায় ৩৭ নম্বর এবং নাগরিক সম্পৃক্ততায় পেয়েছে ৩০ নম্বর।
তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা কুমিল্লা সিটি করপোরেশন ৮৯ ও তৃতীয় অবস্থানে থাকা সিলেট সিটি করপোরেশন পেয়েছে ৮৫ নম্বর। তালিকায় সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে আছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ১০ এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন পেয়েছে ৩০ নম্বর। এ ছাড়া অন্য সিটি করপোরেশন মধ্যে রাজশাহী সিটি করপোরেশন ৫৩ নম্বর, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন ৫৯ নম্বর, গাজীপুর সিটি করপোরেশন ৬৭ নম্বর, খুলনা সিটি করপোরেশন ৭৪ নম্বর, বরিশাল সিটি করপোরেশন ৭৬ নম্বর, রংপুর সিটি করপোরেশন ৮০ নম্বর ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ৮১ নম্বর পেয়েছে।
চসিকের সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন কালবেলাকে বলেন, বর্তমান মেয়র দায়িত্ব নেওয়ার পরদিন থেকেই প্রচণ্ড পরিশ্রম করছেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ওয়ার্ডগুলোতে গেছেন, সমস্যার সমাধান করেছেন। বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে সভা করছেন। সিডিএ, ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বন্দরসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজগুলো এগিয়ে নিয়েছেন। এসব কারণেই এবার চট্টগ্রাম সেরা হয়েছে।
মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমের মধ্যে শৃঙ্খলা, জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা এবং ইফেক্টিভনেস বৃদ্ধি করায় সিটি গভর্ন্যান্স মূল্যায়নের মূল উদ্দেশ্য। ওরা বিশ্লেষণ করে দেখেছে, যে সূচকগুলোতে কাজ ঠিকভাবে হলে সিটি করপোরেশনের সেবা জনগণের কাছে খুব ভালোভাবে পৌঁছাবে, ওই সূচকগুলোই ঠিক করেছে। যেমন- রাস্তা ও নালা–নর্দমা সংস্কার, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ডেঙ্গু প্রতিরোধ, ইপিআই টিকা দেওয়া, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত, কর আদায়, কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ, ওয়ার্ড পর্যায়ে নিয়মিত সমন্বয় সভা আয়োজন করা, কেন্দ্রীয় পর্যায়ে বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে সভা করা। অর্থাৎ যেসব কার্যক্রম নিলে একটা সিটি করপোরেশন ভালোভাবে কাজ করতে পারবে সেগুলো নিয়ে সূচক করা হয়।
আশরাফুল আমিন বলেন, প্রত্যেকটা সূচকে আবার সাব-সূচক থাকে। সব সূচকে কাজ করে আবার প্রমাণাদি উপস্থাপন করতে হয়। এরপর মন্ত্রণালয় মূল্যায়ন করে।
চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন কালবেলাকে বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগ বিভিন্ন সূচক বিশ্লেষণ করে এ ফলাফল দিয়েছে। এটা আমাদের কঠোর পরিশ্রমের ফল। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরদিন থেকেই কঠোর পরিশ্রম শুরু করেছি। আমাদের এ অর্জনের জন্য সিটি করপোরেশনের সকল কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তারাও কঠোর পরিশ্রম করেছে। নগরবাসীকে ধন্যবাদ না জানলে নয়, কারণ তাদের সার্বিক সহযোগিতা আমার সঙ্গে আছে, যার কারণে দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের মধ্যে আমরা সেরা হয়েছি।
তিনি আরও বলেন, এ পুরস্কার নগরবাসীর প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা এ ধারা অব্যাহত রাখার জন্য চেষ্টা করে যাব। আমাদের সামনে এখন মূল চ্যালেঞ্জ জলাবদ্ধতা। এটার জন্য আমরা দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। আমরা যদি সঠিকভাবে কাজগুলো করতে পারি, তাহলে আল্লাহর রহমতে নগরবাসীকে জনদুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে পারব।
মন্তব্য করুন