নীলফামারী জেলার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট জলঢাকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নানা সমস্যায় জর্জরিত। চিকিৎসকদের অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম, চিকিৎসক সংকট ও ওষুধ বিপণন প্রতিনিধিত্বের দৌরাত্ম্যে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে উপজেলার প্রায় ৪ লাখ মানুষের। রোগীদের বিড়ম্বনার অভিযোগের ঘটনা অহরহ পাওয়া যায়।
রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, সরকারি এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য চিকিৎসা যন্ত্রপাতিসহ সব কিছুর জোগান দিলেও দায়িত্বরত চিকিৎসকদের উদাসীনতা, সময়মতো ডাক্তার না আসা ও অনিয়মিত চিকিৎসাসেবা দেওয়ায় রোগীরা ঠিকমতো চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না। সরকারের দেওয়া উন্নতমানের যথেষ্ট যন্ত্রপাতি থাকলেও নির্দিষ্ট সময়ের পাওয়া যায় না কোনো প্যাথোলজি সেবা। একসময় অপারেশন থিয়েটারে প্রতিদিন নিয়মিত অপারেশন হলেও এখন নেই কোনো অপারেশনের ব্যবস্থা। সরকারের দেওয়া ডিজিটাল এক্সরে মেশিন থাকলেও রোগীরা পাচ্ছে না কোনো এক্সরে সেবা।
তারা আরও জানান, আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন থাকলেও তা ব্যবহার হয় না, ইসিজি মেশিন থাকলেও ইমারজেন্সি রোগীদের বাহিরে থেকে এ ইসিজি করাতে হয়। ফলে একটু গুরুতর রোগী এলেই উন্নত চিকিৎসার জন্য বিভাগীয় হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাসপাতালের নিজস্ব সেন্ট্রাল স্টোর রুম নেই। দুটি অ্যাম্বুলেন্সের একটির হুদিস নেই অপরটির লাইসেন্স না থাকার কারণে মেরামতের অভাবে পড়ে থাকে দিনের পর দিন। জেনারেটরের ব্যবস্থা থাকলেও কখনো চালু হয় না ফলে অন্ধকারে বা মোমবাতি জ্বালিয়ে হাসপাতালে বসবাস করতে হয় রোগী ও স্বজনদের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের বেহাল অবস্থার চিত্র। ভর্তি রোগীদের কক্ষগুলো অপরিষ্কার। বিশেষ করে শিশু ও ডায়রিয়া কক্ষগুলো অপরিষ্কারের কারণে হাসপাতাল মনে হয় না। এখানে ঢুকলে মনে হয় হাসপাতাল নিজেই অসুস্থ। হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগী দেখার টিকিট থেকে শুরু করে ডাক্তারের পরামর্শ পর্যন্ত ভোগান্তির শেষ নেই। বহির্বিভাগে থাকে না কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। বাধ্য হয়ে উপ-কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার অথবা নার্সদের দিয়েই জোড়াতালি দিয়ে দেওয়া হয় এ সেবা। আশপাশের পরিবেশও অস্বাস্থ্যকর, তাই ডেঙ্গু এবং চিকনগুনিয়ার ভয় কাজ করে রোগীদের।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হয় হাসপাতালটি। কিন্তু জনবলের চাহিদা বাড়েনি। ভবন থাকলেও জনবল সংকট ও বরাদ্দ না পাওয়ায় অব্যবহৃত পড়ে আছে সেটি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটিতে চিকিৎসকের ২৫টি পদ থাকলেও একজন গাইনি (জুনিয়র) কনসালট্যান্ট, একজন অ্যানেসথেসিয়া (জুনিয়র) কনসালট্যান্ট, মেডিকেল অফিসার দুজন, আবাসিক মেডিকেল অফিসার একজনসহ মাত্র ছয়জন কর্মরত রয়েছেন। ইমার্জেন্সি ছাড়া ডাক্তারকে পাওয়া যায় না। প্রতিদিন দুবার আবাসিক মেডিকেল অফিসার হাসপাতাল পরিদর্শনে যাওয়ার কথা থাকলেও শুধু সকালে একবারই তাকে পাওয়া যায়।
চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলা এবং পৌর এলাকার অনেকেই বলেন, প্রচণ্ড অপরিষ্কার, তার মধ্যে সকালে একবার একজন ডাক্তার এসেছিলেন, এরপর আর কেউ আসেননি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকতা ডা. কাজী মোহাম্মদ আতিকুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, মাত্র ছয় চিকিৎসক দিয়ে পুরো উপজেলার মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা সহজ নয়। এমনটাই হয়ে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। আমারও অভ্যাস হয়ে গেছে, তাই এটাকে তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে করি না।
ডা. আতিকুল ইসলাম বলেন, শূন্যপদে জনবল চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। জনবল পূরণ হলে সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবার পরিধি বাড়বে।
উল্লেখ্য, জলঢাকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবলের ঘাটতি পূরণ করে সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবার পরিধি বাড়ানোসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র সহজলভ্য করে এ উপজেলার সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবা যথাযথভাবে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী রোগী ও তার স্বজনরা।
মন্তব্য করুন