পাবনার সাঁথিয়ায় চুরির অপবাদে সালিশি বৈঠকের রায়ে দুই ভাইকে জুতার মালা পরিয়ে এলাকা ঘোরানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত দুই সহোদর লোকলজ্জায় ভয়ে গ্রামছাড়া হয়েছে।
গত বুধবার (২৩ এপ্রিল) করমজা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য লোকমান সরদারের বাড়িতে সালিশি বৈঠকে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকেই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় নানা সমালোচনা ও গুঞ্জন।
এদিকে আইনের আশ্রয় না নিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও অন্যরা এভাবে কাউকে শাস্তি দিতে পারেন কি না, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জনমনে।
অভিযুক্তরা হলেন- উপজেলার করমজা ইউনিয়নের আফড়া ভাদালিয়াপাড়া গ্রামের আব্দুল মন্ডলের ছেলে বাবু মন্ডল (২৭) ও তার আপন ছোট ভাই হোসেন মন্ডল (২৪)।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) রাতে উপজেলার আফড়া ভাদালিয়াপাড়া গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে রহম আলীর বাড়িতে সিঁধ কেটে চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের জড়িত থাকার সন্দেহে গত বুধবার সকালে করমজা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য লোকমান সরদারের বাড়িতে সালিশি বৈঠক বসে। সেখানে গ্রাম্যপ্রধানদের রায়ে তাদের জুতার মালা পরিয়ে গ্রামে ঘোরানো হয়।
ঘটনার পর থেকে ভুক্তভোগীরা গ্রাম ছেড়েছেন। মোবাইল নম্বর বন্ধ থাকায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তাদের বাবা আব্দুল মন্ডল জানান, আমার ছেলেরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নেই। শত্রুতামূলক মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ইউপি সদস্য লোকামান সরদারের উপস্থিতিতে গ্রাম্যপ্রধানরা আমার ছেলেকে মারধর ও জোর করে চুরির কথা স্বীকার করিয়ে জুতার মালা পরিয়ে ঘুরিয়েছে।
বাবু মন্ডলের স্ত্রী কুলসুম খাতুন ও হোসেন মন্ডলের স্ত্রী পারভিন খাতুন বলেন, আমার স্বামীরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নেই। তারা প্রধানদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে তারপরও তাদেরকে জুতার মালা পড়িয়ে ঘুরানো হয়েছে। লজ্জায় আমাদের স্বামীরা মুখ দেখাতে না পেরে গ্রামছাড়া হয়েছে। আমরা এই মিথ্যা অপবাদের এবং গ্রাম্য প্রধানদের শাস্তি ও বিচার চাই।
ভুক্তভোগীদের মা শিখা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলেদের নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে গ্রাম্যপ্রধানরা জুতার মালা পরানোর ঘটনায় বিচারকদের বিচার চাই। আমার ছেলেরা গাড়ি চালিয়ে সংসার চালাত কিন্তু লোকলজ্জার ভয়ে তারা এখন গ্রামছাড়া।
ইউপি সদস্য লোকমান সরদার বলেন, অভিযুক্তরা দুজনে আপন ভাই। তারা সিঁধ কেটে চুরি করতে ঢুকেছিল। সে সময় হাতেনাতে কেউ না ধরলেও ওই যুবকরাই এ ঘটনায় জড়িত বলে বিভিন্নভাবে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। এ ঘটনায় আমার বাড়িতে সালিশ বসেছিল এবং প্রধান হিসেবে আমি উপস্থিত থেকে স্বাক্ষর করেছিলাম। কিন্তু জরুরি কাজের জন্য আমি বাইরে চলে গিয়েছিলাম। সালিশে রায়ের সময় আমি ছিলাম না। সালিশের রায় এবং জুতার মালা পরিয়ে ঘোরানোর বিষয়ে কিছু জানি না।
সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুর রহমান জানান, এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে গ্রাম্যপ্রধানরা এ ঘটনায় তারা আইনের আশ্রয় নিতে পারত। জুতার মালা পরিয়ে তাদের গ্রামে ঘোরানো উচিত হয়নি।
মন্তব্য করুন