পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ পৌরসভার মধ্যপাড়া এলাকার রাজু ইসলামের স্বপ্ন এখন নিজের জমিতে একটি টিউবওয়েল কিংবা টয়লেট বসানো। জমির বৈধ মালিকানা থাকার পরও মামা আজিজার রহমানের বাধায় রাজু ও তার পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছেন। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় প্রশাসন ও বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরলেও মেলেনি কোনো স্থায়ী সমাধান।
ভুক্তভোগী রাজু ইসলাম জানান, ২০১০ সালে তার মা তিন ছেলের নামে সাড়ে তিন শতক জমি দান করেন। পরে ২০১৯ সালে রাজু তার দুই ভাইয়ের অংশও কিনে নেন। সেই থেকে মামা আজিজার রহমানের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ শুরু হয়। রাজুর অভিযোগ, চলাচলের পথ বন্ধ করে তাকে জমি থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা করা হচ্ছে। টিউবওয়েল বা টয়লেট বসাতে গেলেই মামা ও তার লোকজন বাধা দেন, এমনকি আক্রমণাত্মক আচরণ করেন।
চলতি বছরের ৯ এপ্রিল রাজু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। গণশুনানি শেষে ১৬ এপ্রিল ইউএনও তার পক্ষে রায় দিয়ে স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি দেন। কিন্তু পরে ফের বাধা দেওয়া হয়। প্রথমদিকে প্রতিবেশীরা সহায়তা করলেও বর্তমানে ভয়ে কেউ এগিয়ে আসছেন না। ফলে পরিবার নিয়ে রাজুকে দুই কিলোমিটার দূরে ভাইয়ের বাড়ি গিয়ে পানি সংগ্রহ ও টয়লেট ব্যবহার করতে হচ্ছে।
রাজুর স্ত্রী বলেন, ‘১৫ বছর ধরে এখানে আছি, এখানকার ভোটার। অথচ আমার ঘরে টয়লেট নেই, টিউবওয়েল নেই। এমনকি চালার একপাশ ভেঙে দিয়েছে। বিচার চাইতে গিয়ে এক অফিস থেকে আরেক অফিসে ঘুরছি।’
রাজু ইসলাম বলেন, ‘আমি জমির মালিক হয়েও উচ্ছেদের মুখে। মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। ইউএনও আমার পক্ষে রায় দিয়েছেন। কিন্তু এখনো থানায় গিয়ে ঘুরছি। এখন বলছে হাইকোর্টে যান। আমি সবার কাছে অনুরোধ করছি- যদি কাগজ ঠিক থাকে, আমাকে টয়লেট-টিউবওয়েল বসাতে দেওয়া হোক।’
অন্যদিকে সব অভিযোগ অস্বীকার করে আজিজার রহমান বলেন, ‘আমার বোন আমাদের জমি দান করেছিলেন ২০১০ সালে। পরে আবার শুনি তিনি নাবালক ছেলেদের নামে দান করেছেন। এরপর বড় ভাগিনা সব জমি কিনে নেয়। এখন এ নিয়ে আদালতে মামলা চলছে।’
এ বিষয়ে দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান কালবেলাকে বলেন, ‘শুনানিতে কাগজপত্র দেখে আমরা নিশ্চিত হয়েছি জমিতে রাজু ইসলামের মালিকানা আছে। তাকে জানানো হয়েছে, তিনি স্থাপনা নির্মাণ করতে পারবেন। কেউ বাধা দিলে তা ফৌজদারি অপরাধ, পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারবে।’
দেবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোয়েল রানা কালবেলাকে বলেন, ‘রাজু ইসলাম থানায় অভিযোগ করলে আমি নিজেই স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মিটমাটের চেষ্টা করি। পরে ইউএনও বরাবর অভিযোগ দিলে গণশুনানিতে তিনি রায় দেন এবং আদালতের পরামর্শ দেন। বিষয়টি পুলিশ সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং সহযোগিতা করা হচ্ছে।’
মন্তব্য করুন