বিদেশে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে জিম্মি ও নির্যাতন করে পরিবারের কাছে মুক্তিপণ আদায়কারী চক্রের মূলহোতাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৫।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) নওগাঁর রানীনগর উপজেলার সিংগারা পাড়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার আসামির নাম জাহিদ হোসেন (২৭)। তিনি রানীনগর উপজেলার সিংগারা পাড়া এলাকার এহরাম সরদারের ছেলে।
শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে র্যাব-৫ সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৫ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মাসুদ পারভেজ এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, প্রায় দুবছর আগে ফেসবুকের মাধ্যমে ইয়াকুব আলীর সঙ্গে পরিচিত হন জাহিদ। তখন তিনি ইয়াকুবকে ইতালি যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বলেছিলেন, ইতালিতে তার একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং সেখানে চাকরির জন্য অনেক সুযোগ রয়েছে। ইয়াকুবের আগ্রহের পর জাহিদ তাকে তার বাবা এহরাম সরদার ও চাচা বাবু মোল্লার সঙ্গে দেখা করতে বলেন। ২০২৩ সালের ১০ আগস্ট তারা দেখা করার পর ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে ইতালি যাওয়ার বিষয়ে চুক্তি করেন। পাঁচ লাখ টাকা আগাম পরিশোধের পর ইয়াকুবকে ফ্লাইটের সময় জানানো হয়।
পরে ইয়াকুবের পাসপোর্ট নিয়ে জাহিদ তাকে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইটে করে আরও ২৬ জনের সঙ্গে দুবাই পাঠান। একই বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর এমিরাত এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তারা দুবাই পৌঁছান। এরপর সেখান থেকে নাইজার এবং আলজেরিয়া নেওয়া হয়। সেখানে ২৭ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলে ২১ দিন জেলও খাটতে হয় তাদের। পরে তাদের তিউনিশিয়া এবং পরে লিবিয়ায় নিয়ে যায় চক্রটি।
লিবিয়ায় একটি বাড়িতে বন্দি রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয় তাদের। এরপর ছবি ও ভিডিও ধারণ করে পরিবারের কাছে পাঠানো হয় এবং মুক্তিপণ আদায় করা হয়। ইয়াকুবের পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছিল। ৩৫ লাখ টাকা বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় বাংলাদেশের গণমাধ্যমে খবর প্রচারের পর লিবিয়ায় বাংলাদেশের দূতাবাসের মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মো. খাইরুল বাশারের উদ্যোগে তাদের উদ্ধার করা হয়। গত ৯ জানুয়ারি ইয়াকুব দেশে ফিরে আসেন এবং গত ২৫ মার্চ এ ঘটনায় কুড়িগ্রাম সদর থানায় মামলা করেন। এর প্রেক্ষিতে আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযানে নামে র্যাব।
তিনি আরও বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নওগাঁর রানীনগর উপজেলার সিংগারা পাড়া এলাকায় নিজ বসতবাড়িতে অভিযান চালিয়ে জাহিদ হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার জাহিদ নিজের অপরাধ স্বীকার করেছেন এবং বিদেশগামীদের সঙ্গে চুক্তি করে তাদের জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করতেন বলে জানিয়েছেন। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। গ্রেপ্তার আসামিকে কুড়িগ্রাম সদর থানায় হস্তান্তর প্রক্রিয়াধীন আছে।
মন্তব্য করুন