সাভারের বংশী নদীর তীরে ময়লার ভাগাড়ে কুড়িয়ে পাওয়া দুই মাস বয়সী শিশু সেতুর হৃৎপিণ্ডে ছিদ্র ধরা পড়েছে। শিশুটির শারীরিক অবস্থা জটিল হয়ে পড়ায় উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন তাকে কুড়িয়ে পাওয়া বৃদ্ধা কামরুনাহার। শিশুটির চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে হিমশিম খাচ্ছেন কামরুনাহার। ইতোমধ্যে চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে নিজের ব্যবহৃত স্বর্ণালঙ্কারও বিক্রি করেছেন তিনি।
এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুটিকে নিয়ে তিনি বলেন, ‘ওকে পাওয়ার পর থেকেই ওর শ্বাসকষ্ট ছিল। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করেও অবস্থার উন্নতি হয়নি। পরে এনাম মেডিকেলে এনে জানতে পারি, ওর হার্টে ছিদ্র রয়েছে। এই অপারেশনের খরচ বহন করা আমার পক্ষে অসম্ভব।’
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এনাম মেডিকেলের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা শিশুটির হার্টে জন্মগত ক্রুটি শনাক্ত করেছেন।
এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. আনোয়ারুল কাদের নাজিম বলেন, ‘শিশুটির অপারেশনটি জটিল এবং এটি দেশের হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে হয়। আমরা ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। চেষ্টা করছি যেন দ্রুততার সঙ্গে অপারেশন করানো যায়।’
এদিকে শিশুটির খোঁজ নিতে হাসপাতালে ছুটে যান সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু বকর সরকার। শিশুটিকে দেখে আপ্লুত হয়ে পরম মমতায় নিজের কোলে তুলে নেন।
শিশুর সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ শেষে তিনি জানান, ‘শিশুটির চিকিৎসায় সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে। ইতোমধ্যে কিছু অর্থ সহায়তা দিয়েছি এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সহায়তা অব্যাহত থাকবে।’
এ ঘটনায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহপরিবার কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. দেওয়ান মো. সালাউদ্দিন বাবুসহ স্থানীয় বিএনপি নেতারাও পাশে দাঁড়িয়েছেন। তারা জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘটনাটি অবগত হয়েছেন এবং প্রাথমিকভাবে শিশুটির চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা পাঠিয়েছেন। পরবর্তীতেও সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে জানান তারা।
তবে বড় চ্যালেঞ্জ এখন অপারেশনের সময়সূচি। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে অপারেশনের সিরিয়াল পেতে কয়েক মাস সময় লেগে যেতে পারে বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে ইউএনওর তৎপরতায় ঢাকা জেলার ডিসি ও স্বাস্থ্য উপদেষ্টার দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত অপারেশনের জন্য সীট বরাদ্দের নিশ্চয়তা পাওয়া গেছে।
শিশু সেতুর সুস্থতার জন্য এখন সবার একটাই চাওয়া—শিগগিরই সফল অপারেশন সম্পন্ন হোক এবং নবজীবন ফিরে পাক ভাগ্যাহত এই শিশুটি।
এর আগে, গত ২০ ফেব্রুয়ারি সাভারের বংশী নদীর পাড়ের ময়লার ভাগার থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করেন স্থানীয় এক মানবিক নারী কামরুন্নাহার। পরে শিশুটিকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মন্তব্য করুন