২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল এক ভয়াবহ দিন, যেদিন সাভারের রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে প্রাণ হারান এক হাজার ১৩৮ জন শ্রমিক। সেই কালো দিনটির ১২ বছর পূর্ণ হয়েছে বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল)। অথচ এত বছর পেরিয়ে গেলেও ঘটনার বিচার এখনো অসম্পূর্ণ, পুনর্বাসনও হয়নি সুষ্ঠুভাবে।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) সকাল থেকে রানা প্লাজার ধ্বংসাবশেষের সামনে জড়ো হন নিহতদের স্বজন, আহত শ্রমিক ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। অস্থায়ী শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে তারা শ্রদ্ধা জানান। চারপাশে ধ্বনিত হয় ‘দায়ীদের বিচার চাই, ক্ষতিপূরণ চাই।’
ভুক্তভোগী ইয়ানুর বেগম, যিনি রানা প্লাজার ষষ্ঠ তলায় কাজ করতেন, কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘১২ বছর পার হইলো, এখনো ঠিকমতো চিকিৎসা পাই না। সরকার শুধু আশ্বাস দেয়, কাজ করে না।’
শ্রমিক সংগঠনগুলো দাবি জানিয়েছে, রানা প্লাজার সামনে স্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ, ২৪ এপ্রিলকে রাষ্ট্রীয় শোক দিবস ঘোষণাসহ আইএলও কনভেনশন ১২১ অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন সম্পাদক খাইরুল মামুন বলেন, ‘আহত শ্রমিকেরা এখনো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে চিকিৎসার জন্য। এই অবহেলার জবাব চাই।’
একই দিনে সকাল ১১টায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শ্রম উইং আয়োজন করে পৃথক এক সমাবেশ। রানা প্লাজার সামনে আয়োজিত ওই সমাবেশে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়ার আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে এনসিপি’র সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘রানা প্লাজার ভবনে ফাটল থাকলেও, রাজনৈতিক দাপটে তা উপেক্ষা করে শ্রমিকদের জীবনের ঝুঁকিতে কাজে বাধ্য করা হয়েছিল। বিদেশি সংস্থাগুলো উদ্ধারকাজে আগ্রহ দেখালেও সরকারের পক্ষ থেকে অনুমতি না দেওয়ার পেছনে ছিল ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা।’
তিনি আরও বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের মাধ্যমে দায়ীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। একইসঙ্গে শ্রমিকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।’
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির শ্রমিক উইংয়ের প্রধান সমন্বয়কারী মাজহারুল ইসলাম, যুগ্ম সদস্যসচিব রিফাত রশীদ, আব্দুল্লাহ আল আমিন, জয়নাল আবেদিন শিশির, মেহেরাব সিফাতসহ অনেকে।
এদিন দুপুরে নিহতদের স্মরণে শ্রদ্ধা জানান শ্রমসচিব এএইচ এম সফিকুজ্জামান। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘রানা প্লাজার ঘটনায় দোষীদের বিচারে ইতোমধ্যে অগ্রগতি হয়েছে। আশা করছি আগামী বছর এই সময়ের আগেই বড় একটি অগ্রগতি দেখানো সম্ভব হবে।’
তিনি জানান, আহত শ্রমিকদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের বিষয়েও সরকার নতুন পরিকল্পনা নিচ্ছে। তবে তিনি স্বীকার করেন, ‘একযুগ পার হলেও এখনো আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে শ্রম অধিকার বাস্তবায়ন পুরোপুরি হয়নি।’
মন্তব্য করুন