রংপুরে মাদক মামলার সাক্ষী এক গ্রাম পুলিশকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে র্যাবের বিরুদ্ধে। গ্রেপ্তার হওয়া গ্রাম পুলিশের পরিবারের দাবি, র্যাবের একজন সদস্য তাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ফাঁসিয়েছেন। তবে র্যাব জানিয়েছে, আটকের পর তার কাছ থেকে ৩৯০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।
এ ঘটনায় র্যাব বাদী হয়ে নগরীর হাজীরহাট থানায় মামলা করেছে। গ্রেপ্তার গ্রাম পুলিশের নাম আব্দুর রহিম ঝন্টু। তিনি গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্ণেয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা। একই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
র্যাব-১৩ এর দায়ের করা মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২১ এপ্রিল দুপুরে গোপন সংবাদ পেয়ে র্যাবের একটি দল নগরীর হাজীরহাট এলাকার উত্তম স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে যায়। এ সময় তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে পালানোর চেষ্টাকালে গ্রাম পুলিশ আব্দুর রহিম ঝন্টুকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে ৩৯০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। পরে তার বিরুদ্ধে মামলা করে র্যাব।
তবে র্যাবের এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে ঝন্টুর পরিবার। সংবাদ সম্মেলন ডেকে ঝন্টুর বাবা সাবেদ আলী জানান, অর্ধশতাধিক মাদক ও চোরাচালান মামলার সাক্ষী তার ছেলে ঝন্টু। এ নিয়ে স্থানীয় মাদক কারবারিদের সঙ্গে তার বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে কিছুদিন আগে তাকে মাদক কারবারিরা মারধর করেছে। পরে থানায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগও দেওয়া হয়েছে।
তিনি দাবি করেন, গ্রেপ্তারের আগের দিন (২০ এপ্রিল) পূর্ব পরিচিত র্যাব সদস্য রাসেল দেখা করে কথা বলতে ঝন্টুকে রংপুর শহরে ডাকেন। পরের দিন স্থানীয় দুজনকে সঙ্গে নিয়ে ঝন্টু ওই র্যাব সদস্যের সঙ্গে দেখা করতে আসে। এ সময় মাদক কারবারিরা পরিকল্পনা করে তার ছেলেকে ডেকে এনে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
মাদকের এলাকা হিসেবে পরিচিত গঙ্গাচড়ার মর্ণেয়া ইউনিয়নে মাদক কারবারি ও সেবনকারীদের বিরুদ্ধে হওয়া অনেক মামলার সাক্ষী আব্দুর রহিম ঝন্টু। কালবেলার হাতে ১৫টি মাদক মামলার নথি এসেছে। সেগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে প্রতিটি মামলার সাক্ষী ঝন্টু।
গঙ্গাচড়া মডেল থানার ওসি আল এমরান বলেন, তিনি অনেক মামলার সাক্ষী। তবে মামলার সংখ্যা কত তা এ মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়।
তিনি মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এমন কোনো অভিযোগ তাদের কাছে আছে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এলাকার লোকজন বলে, তবে আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্যপ্রমাণ নেই।’
অভিযোগ বিষয়ে জানতে র্যাব সদস্য রাসেলকে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তা রিসিভ হয়নি।
এ বিষয়ে কথা বলতে র্যাব-১৩ এর সদর দপ্তরে দুদিন গেলেও কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কর্মকর্তারা সবাই ব্যস্ত আছেন, কথা বলা সম্ভব নয় জানিয়ে দুদিনই মূল গেট থেকে ফেরত পাঠানো হয়।
পরে সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) আবুল হাসানকে একাধিকবার কল দিলেও ফোন রিসিভ হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চেয়ে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে নগরীর হাজীরহাট থানার ওসি আব্দুল আল মামুন শাহ কালবেলাকে বলেন, ৩৯০ পিস ইয়াবাসহ একজনকে র্যাব গ্রেপ্তার করেছে। তারা এ মামলার বাদী। এর বেশি কিছু বলতে পারব না। মামলার তদন্ত চলছে।
মর্ণেয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, আমার জানামতে এ এলাকায় মাদকের ছড়াছড়ি বেশি। কিন্তু গ্রাম পুলিশ ঝন্টু ওদের সঙ্গে জড়িত নয়। থানা থেকে প্রতিদিন পুলিশ এলে ঝন্টু তাদের সাহায্য করে।
মন্তব্য করুন