কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে স্ত্রীকে হত্যার আড়াই মাস পর রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। ১৬৪ ধারা জবানবন্দিতে স্ত্রী শাহিদা বেগমের স্বামী আবদুল মমিন নিজেই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ।
পুলিশ জানায়, ঘোলপাশা ইউনিয়নের ধনুসাড়া গ্রামে গত ৩ ফেব্রুয়ারি সকালে বাড়ির টয়লেটে শাহিদা বেগমের লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় তার ছেলে মাছুম বিল্লাহ বাদী ও স্বামী আবদুল মমিন (৭৫) ১ নম্বর সাক্ষী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা করা হয়। মামলার পর তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই হেশাম উদ্দিন গত ২৭ মার্চ আব্দুল মমিনকে নিজ বাড়ি থেকে আটক করে।
তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতের মাধ্যমে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। আদালত দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গত ২১ এপ্রিল পুলিশ মমিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে চৌদ্দগ্রাম থানায় নিয়ে আসে। কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে একপর্যায়ে শাহিদা বেগমকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেন এবং আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ঘটনার বিস্তারিত প্রকাশ করেন।
মমিনের বরাতে পুলিশ জানায়, আবদুল মমিনের মা জীবিত এবং বয়স ১৩০ এর কাছাকাছি। তিনি চলাফেরা করতে পারেন না। মায়ের সেবা যত্ম নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে তার প্রায় ঝগড়া হতো। আবদুল মমিন ও তার ভাই পালাক্রমে এক মাস করে তার মায়ের দায়িত্ব নিয়ে সেবা যত্ন করতেন। মমিন তার মাকে নিজেদের অন্য একটি বাড়িতে রাখতেন।
মমিন ও তার স্ত্রী শাহিদা বেগম ধনুসাড়া পূর্বপাড়ায় তাদের নতুন বাড়িতে থাকেন। তিনি স্থানীয় মসজিদে ইমামতি করেন। তার মা যখন তার পুরোনো বাড়িতে অবস্থান করছিলেন তখন মমিন সেখানে মায়ের খোঁজ খবর নিতে যান। তখন তার মা অভিযোগ করেন, তার স্ত্রী তার মায়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে। ঠিকঠাক মতো সেবা যত্ন করে না।
ওইদিন গভীর রাতে মমিন তার স্ত্রী শাহিদা বেগমকে মায়ের সঙ্গে খারাপ আচরণের কথা জিজ্ঞেস করে। এতে শাহিদা বেগম গালমন্দ শুরু করেন। এ সময় মমিন তার পাশে থাকা বালিশ দিয়ে তার স্ত্রীকে নাক ও মুখে চাপ দিয়ে ধরে রাখে। কিছুক্ষণ পর দেখেন, তার স্ত্রী আর নড়াচড়া করছেন না। একপর্যায়ে বুঝতে পারেন, তার স্ত্রী আর বেঁচে নেই। পরে ভোর ৪টা থেকে সাড়ে ৪টায় স্ত্রীর লাশ কাঁধে করে বাড়ির উত্তর পাশে টয়লেটের রিংয়ের ভেতরে রেখে ওপরের ঢাকনাটি আবার লাগিয়ে দেন।
লাশ টয়লেটে রেখে ভোর ৫টায় আবদুল মমিন মসজিদে চলে যান। মসজিদ থেকে এসে তার ছেলেকে ফোন দিয়ে বলেন, তোমার মাকে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে তার ছেলেসহ আশপাশের লোকজন মমিনের নতুন বাড়িতে এসে অনেক খোঁজাখুজির পর সকাল সাড়ে ৭টায় লাশ খুঁজে পায়।
মন্তব্য করুন