সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (সিমেবি) নিয়ে যে কোনো ষড়যন্ত্র কঠোরভাবে প্রতিহত করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সিলেটের সুধীজনরা। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়কে টিকিয়ে রাখতে বর্তমান প্রশাসনের যে কোনো উদ্যোগে সিলেটবাসী পাশে থাকবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তারা।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের মেডিকেল এডুকেশন ইউনিট মিলনায়তনে ‘সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যৎ করণীয়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন সুধীজনরা।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল পাটওয়ারী এবং পরিচালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন ও সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. জিয়াউর রহমান চৌধুরী। এতে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেন কোষাধ্যক্ষ শাহ আলম।
সভায় সিমেবি’র কোষাধ্যক্ষ শাহ আলম জানান, প্রতিষ্ঠানটির সংকটের শুরু সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোর্শেদ আহম্মেদ চৌধুরীর সময় থেকে। তিনি সিন্ডিকেটের অনুমোদন ছাড়াই চারবার অবৈধভাবে অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্তদের চাকরির মেয়াদ বাড়িয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক অনুমোদিত ১১২টি পদের বিপরীতে প্রায় ২৪০ জনকে অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৫৮ জনের নিয়োগে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে।
মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির যৌথ তদন্তে ‘সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১৮’ এর ১২(১০) ধারা অনুযায়ী এসব নিয়োগ অবৈধ প্রমাণিত হয়। ফলে ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে ২৪০ জনের অধিক কর্মচারীর চাকরি বাতিল ও বেতন-ভাতা স্থগিত করা হয়। এর প্রতিবাদে তারা আন্দোলনে নামেন এবং ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে অবস্থান শুরু করেন। এ সময় ক্যাম্পাসে ভাঙচুর, তালা ভেঙে কক্ষের আলমিরা ও ফাইল কেবিনেট থেকে জরুরি নথি, ব্যাংকের চেক বহি এবং গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র লুট করার ঘটনা ঘটে। ফলে প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়ে ওসমানী মেডিকেল কলেজে স্থানান্তর করা হয়েছে।
উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল পাটওয়ারী জানান, বর্তমানে তিনি ও রেজিস্ট্রার ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী কোনো কর্মী নেই। দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে স্টাফ নিয়ে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। অবৈধ নিয়োগ বাতিল হওয়ায় এগুলো নিয়মিত করার সুযোগ নেই। আন্দোলনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। তিনি অস্থায়ী ক্যাম্পাসে কাজ করতে না পেরে ওসমানী মেডিকেল কলেজের একটি কক্ষে অফিস পরিচালনা করছেন।
উপাচার্য জানান, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৮০ একর জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সম্প্রতি প্রকল্পের পিডি নিয়োগ করা হয়েছে। মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী, ১২০০ বেডের একটি হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে, যা বিদেশের চিকিৎসার ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থান ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটাবে।
মতবিনিময় সভায় সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন, প্রতিষ্ঠানটি বাঁচাতে আমরা যেকোনো পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। ফ্যাসিস্ট অপশক্তির যেকোনো অপচেষ্টা প্রতিহত করা হবে।
সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, সংকটের কারণে প্রতিষ্ঠানটি স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে পারছে না। অবিলম্বে নিয়োগ নীতিমালা ও বিধিমালা প্রণয়ন করতে হবে। এই অচলাবস্থার কারণে অধিভুক্ত মেডিকেল কলেজগুলোও সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সভায় উপস্থিত সুধীজনেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন। তারা বলেন, এটি শুধু সিলেটের নয়, পুরো দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান। সংকট মোকাবিলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
উপস্থিত ছিলেন, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল উমর রাশেদ মুনির, দৈনিক জালালাবাদ সম্পাদক মুকতাবিস উন-নূর, সিলেট জেলা জামায়াতের আমির হাবিবুর রহমান হাবিব, সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী, সিলেট প্রেস ক্লাব সভাপতি ইকরামুল কবির, সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম ।
মন্তব্য করুন