নির্মাণকাজের সন্ধানে কক্সবাজার গিয়ে নিখোঁজ সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার এক গ্রামের ৫ তরুণসহ ৬ জন। এক সপ্তাহ ধরে তাদের কোনো সন্ধান না পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা। নির্মাণশ্রমিকের কাজ করতে তারা কক্সবাজার গিয়েছিলেন। সেখানে পৌঁছানোর পর থেকে তাদের সবার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবার।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ করতে ওই ছয়জন গত ১৫ এপ্রিল কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা হন। ১৬ এপ্রিল তারা কক্সবাজার পৌঁছান। এরপর থেকে তাদের সবার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। কক্সবাজারে এক ঠিকাদারের অধীনে তাদের কাজ করার কথা ছিল।
নিখোঁজ ব্যক্তিরা হলেন- সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার খলাছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম লোহারমহল গ্রামের মৃত লুকুছ মিয়ার ছেলে রশিদ আহমদ (২০), ফারুক আহমদের ছেলে মারুফ আহমদ (১৮), আজির উদ্দিনের ছেলে শাহিন আহমদ (২১), মৃত দুরাই মিয়ার ছেলে এমাদ উদ্দিন (২২), সফর উদ্দিনের ছেলে খালেদ হাসান (১৯) ও মৃত সরবদি মিয়ার ছেলে আব্দুল জলিল (৫৫)।
প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় নিখোঁজ এমাদ উদ্দিনের চাচাতো ভাই ও নিখোঁজ খালেদ হাসানের চাচা আব্দুল বাছিত দুলালের। তিনি জানান, এমাদ উদ্দিন ও খালেদ আহমদসহ তাদের সঙ্গীয় সবাই ১৫ এপ্রিল বাড়ি থেকে বের হয়ে ১৬ এপ্রিল কক্সবাজার পৌঁছেন। ওইদিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে এমাদ উদ্দিন কল দিয়ে বাড়িতে জানিয়েছে তারা সবাই কর্মস্থলে পৌঁছেছেন। এরপর আর বাড়িতে যোগাযোগ করেনি। তখন বাড়ি থেকে কল করা হলে মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর এমাদ ও খালেদের সঙ্গে থাকা অন্যদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তখন তাদের মোবাইল নম্বরও বন্ধ মিলে। প্রথমে বিষয়টিকে স্বাভাবিক মনে হয়েছে। কিন্তু পাঁচ দিনেও কারো মোবাইলে কল না যাওয়ার কারণে বিষয়টি অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় জকিগঞ্জ থানায় জিডি করতে চাইলে পুলিশ পরামর্শ দিয়েছে কক্সবাজারে জিডি করার জন্য। সেখানের থানায় জকিগঞ্জ থানা থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। আমাদের লোকজন কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।
নিখোঁজ রশিদের ভাই আব্দুল বাছিত বলেন, রশিদ কয়েক বছর থেকে চট্টগ্রামে এক ঠিকাদারের অধীনে কাজ কাজ করত। বিভিন্ন সময়ে বাড়িতে আসা যাওয়া ছিল। চট্টগ্রামের ঠিকাদারের মাধ্যমে কক্সবাজার এইবার প্রথম গিয়েছে। কক্সবাজার যাওয়ার পর থেকে রশিদসহ সঙ্গে থাকা সবার মোবাইল ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে। তবে ওই ঠিকাদারের নাম-ঠিকানা নিখোঁজ রশিদের ভাইয়ের জানা নেই।
তিনি বলেন, আমাদের ধারণা তাদেরকে ওইখানে যে লোক নিয়েছে ওই লোক তাদেরকে কিছু করেছে। কেউ জিম্মি করলে কারো না কারো পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে টাকা পয়সা দাবি করত।
নিখোঁজ খালেদ হাসানের বাবা ও ইউপি সদস্য সফর উদ্দিন বলেন, তারা কাজের জন্য চট্টগ্রাম গিয়ে ৫-৬ মাস সেখানে থাকে। ঈদে বাড়িতে আসে। তাছাড়া সারা বছরই চট্টগ্রামে রাজমিস্ত্রির কাজ করে। মঙ্গলবার আমার ছেলে বাড়ি থেকে যাওয়ার পরে আর কোনো যোগাযোগ নেই। ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় পরিবার আত্মীয়স্বজনরা অস্থির হয়ে পড়েছেন। খালেদের মা ছেলের জন্য কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। কোনোভাবেই সান্ত্বনা দেওয়া যাচ্ছে না। রোববার সারারাত থানায় ছিলাম। যে ঠিকাদার নিয়েছিল তার মোবাইল নম্বরও বন্ধ। থানার ওসি খবর নিয়ে আমাদেরকে জানিয়েছেন, চট্টগ্রামের ওই ঠিকাদারের নাম রশিদ ও তার সঙ্গের অপর একজনের নাম বাবুল।
তিনি আরও বলেন, যে জায়গা থেকে তারা নিখোঁজ হয়েছে সেখানে অভিযোগ দেয়ার জন্য পুলিশ আমাদেরকে পরামর্শ দিয়েছে। আমাদের এলাকার অনেক লোক সেখানে বিভিন্ন ধরনের কাজ করেন। তারাও তাদের মতো করে খোঁজাখুঁজি করছেন। কিন্তু কোথাও নিখোঁজ ৬ জনের মধ্যে কারো সন্ধান মেলেনি। আমার সেই এলাকায় গিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হব। পুলিশ বলছে, মোবাইলের লোকেশন ট্র্যাকিং করে ৬ জনের সর্বশেষ অবস্থান কক্সবাজার দেখা গেছে। তাদের খোঁজ পেতে পুলিশ কাজ করছে।
জকিগঞ্জ থানার ওসি জহিরুল ইসলাম মুন্না কালবেলাকে বলেন, ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। ট্র্যাকিংয়ে দেখা গেছে, নিখোঁজদের মধ্যে দুজনের মোবাইলের শেষ অবস্থান কক্সবাজারের টেকনাফে ছিল। আমরা কক্সবাজার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি এবং তাদের পরিবারকে কক্সবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পরামর্শ দিয়েছি।
টেকনাফ মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন জানান, এখন পর্যন্ত থানায় কেউ সরাসরি অভিযোগ করেনি। তবে বিষয়টি আমরা শুনেছি এবং অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন