খাগড়াছড়িতে অপহরণের শিকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পাঁচ শিক্ষার্থীর সন্ধান মেলেনি পাঁচ দিনেও। তাদের উদ্ধারে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছেন যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। অন্তত তিনটি স্থানে অভিযান চালিয়েও তাদের উদ্ধার করা যায়নি।
গত বুধবার (১৬ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে খাগড়াছড়ির গিরিফুল এলাকা থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী অপহরণের শিকার হয়।
অপহৃতরা হলেন- পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ-পিসিপি চবি শাখার সদস্য রিশন চাকমা ও তার চার বন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী মৈত্রীময় চাকমা, নাট্যকলা বিভাগের দিব্যি চাকমা, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের লংঙি ম্রো ও চারুকলা বিভাগের অলড্রিন ত্রিপুরা। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
অপহরণের শিকার পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মধ্যে রয়েছেন বান্দরবানের আলিকদম উপজেলার কুরুকপাতা ইউনিয়নে সীমান্ত এলাকার এতিম লংঙি ম্রো। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। লংঙি ম্রোর বাড়ি বান্দরবান জেলার আলিকদম উপজেলার ৪নং কুরুকপাতা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের রেংপুং ম্রো কারবারি নিয়াদুই পাড়া, যা বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী একটি দুর্গম এলাকা।
কুরুকপাতা ইউপির ৯ ওয়ার্ডের সদস্য সাংক্লুত ম্রো জানান, তারা দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে লংঙি চতুর্থ সন্তান। তার বাবা গত বছর অসুখে মারা যান, ফলে তিনি এতিম। বড় ভাই লেখাপড়া না করে সংসারের হাল ধরতে জুমচাষ করে এবং ছোট ভাই লংঙিকে চিটাগাং পড়াশোনা করাচ্ছেন।
কুরুকপাতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ক্রাতপুং ম্রো বলেন, এলাকাটি খুবই দুর্গম অঞ্চলে। আলিকদম থেকে বাইকযোগে এক ঘণ্টায় পোয়ামুহুরীতে যেতে হবে , সেখান থেকে প্রায় ৫ ঘণ্টা হেঁটে গিয়ে রেংপুং ম্রো কারবারি নিয়াদুই পাড়া পৌঁছাতে হয়। যেটা বর্তমান বড় আগলা পাড়া নামে পরিচিত। লংঙি ম্রোর অপহরণের খবর আমি তার মা ও ভাইকে জানিয়েছি। আমরা ম্রো সম্প্রদায়ের লোকজন খুবই চিন্তিত। প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি লংঙিকে মুক্তি দেওয়া হোক।
আলীকদম ম্রো ইয়ুথ অরগানাইজেশনের সভাপতি সেথং ম্রো জানায়, তার বাবা মারা গেছে। মা মৃত্যুশয্যায়। সরকারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আমাদের একটা দাবি লংঙি ম্রোকে সুষ্ঠুভাবে ফিরে আনে, সে যেন ভার্সিটি ফিরে সুষ্ঠু সুন্দরভাবে পড়াশোনা করে ওইটাই আমরা চাই।
অভিযান সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপহরণকারীরা ক্রমাগত জায়গা পরিবর্তন করছে, যে কারণে অপহৃতদের উদ্ধারে বেগ পেতে হচ্ছে। তবে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে পুলিশ, বিজিবি ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা বেশ কয়েকটি জায়গায় একযোগে অভিযান চালাচ্ছেন। অপহৃতদের উদ্ধারের ব্যাপারে তারা আশাবাদী।
জানা গেছে, এই পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব উপলক্ষে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে গিয়েছিলেন। উৎসব শেষে ১৫ এপ্রিল তারা চট্টগ্রামে ফেরার উদ্দেশ্যে খাগড়াছড়ি সদরে যান। তবে চট্টগ্রামগামী বাসের টিকিট না পাওয়ায় তারা সেদিন খাগড়াছড়ি শহর থেকে কিছু দূরে কুকিছড়া নামক জায়গায় রাতযাপন করেন। পরদিন বুধবার সকালে কুকিছড়া থেকে টমটম গাড়িতে চড়ে খাগড়াছড়ি সদরে ফেরার পথে গিরিফুল নামক স্থানে তারা অপহরণকারীদের কবলে পড়েন। টমটম গাড়ির চালকসহ পাঁচ শিক্ষার্থীকে সেখান থেকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে টমটম চালককে ছেড়ে দিলেও শিক্ষার্থীদের ছাড়েনি অপহরণকারীরা।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, অপহৃত পাঁচজনকে উদ্ধারের জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি। জেলা সদরের মধুপুর, পানখাইয়া পাড়া, চাবাই সড়ক নোয়াপাড়া এলাকায় যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়েছে। আরও কিছু জায়গায় অভিযান চলছে। যৌথ বাহিনীর অভিযানের পাশাপাশি বিভিন্ন সড়কে চেকপোস্ট পরিচালিত হচ্ছে।
মন্তব্য করুন