রাজশাহীতে মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় হামলা ও মারধরে আকরাম আলী (৪৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। গত বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় মারধরে তার ছেলে ইমাম হাসান অনন্ত আহত হয়।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) এমন পরিস্থিতিতেই আকরাম আলীর মরদেহ রেখেই তার মেয়েকে বসতে হয় এসএসসি পরীক্ষায়।
নিহত আকরাম হোসেন পেশায় বাসচালক। তিনি রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য এবং তালাইমারী এলাকার প্রয়াত আজাদার আলীর ছেলে।
এ ঘটনায় নিহতের ছেলে ইমাম হাসান অনন্ত বাদী হয়ে নগরীর বোয়ালিয়া থানায় সাতজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও চার থেকে পাঁচজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন। আসামিরা হলো- তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকার কালু মিয়ার ছেলে মো. নান্টু (২৮), প্রয়াত রতনের ছেলে মো. বিশাল (২৮), প্রয়াত আবদুস সাত্তারের ছেলে মো. খোকন মিয়া (২৮), তালাইমারী বাবর আলী রোড এলাকার শাহীনের ছেলে তাসিন হোসেন (২৫), মো. অমি (২৫), জামালের ছেলে মো. নাহিদ (২৫) ও পিরুর ছেলে মো. শিশির (২০)।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকায় আসামিরা লোহার রড, বাঁশের লাঠি, কাঠের লাকড়ি, ইটের টুকরা নিয়ে ইমাম হাসানের ওপর হামলা চালায়। এ সময় নান্টুর হুকুমে অন্য আসামিরা তাকে এলোপাতাড়ি মারধর করতে থাকে। তার চিৎকার শুনে বাবা আকরাম বাঁচাতে এগিয়ে এলে নান্টুর হুকুমে আসামিরা তাকেও এলোপাতাড়ি লাথি ও কিলঘুষি মারতে থাকে। একপর্যায়ে হত্যার উদ্দেশ্যে ইট দিয়ে আকরাম আলীর মাথার পেছনে আঘাত করা হলে তিনি গুরুতর আহত হন। উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, পূর্ব শত্রুতার জেরে এই ঘটনা ঘটেছে। মামলা হয়েছে, পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করেছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
নিহতের স্ত্রী মুক্তি বেগম বলেন, ‘মেয়েকে এলাকার নান্টুসহ কয়েকজন উত্ত্যক্ত করত। ঘটনার দিন বিকেলেও তারা অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেছে। মেয়ে বাড়িতে এসে বিষয়গুলো জানায়। এরপর নান্টুর পরিবারকে জানানো হয়। নান্টুর পরিবার অভিযোগের বিষয়টি নান্টুকে জানায়। এরপর নান্টুসহ কয়েকজন মিলে আমার ছেলেকে রাত ৮টার দিকে মারধর করে। ছেলেকে বাঁচাতে বাবা এগিয়ে গেলে তাকেও মারধরের পাশাপাশি ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়। পরে বাবা-ছেলেকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক আকরামকে মৃত ঘোষণা করেন।’
তিনি বলেন, ‘ছেলে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। মেয়ের এসএসসি পরীক্ষা চলছে। বাবার লাশ রেখে মেয়ে পরীক্ষা দিতে গেল। মেয়ে সারা রাত অনেক কান্নাকাটি করেছে বাবার জন্য। সকালে সে পরীক্ষা দিতে যাবে না। প্রতিবেশী ও স্বজন অনেক বুঝিয়ে তাকে পরীক্ষা দিতে পাঠায়। আল্লাহই জানে মেয়ের পরীক্ষা কেমন হবে। আমার স্বামীকে যারা হত্যা করেছে, আমার সন্তানদের যারা বাবাহারা করেছে তাদের বিচার চাই।’
আকরামের মেয়ে রাজশাহীর অগ্রণী বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এই শিক্ষার্থী সম্পর্কে তার স্কুলের অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘মেয়েটি ক্লাসের ভালো ছাত্রী। শুনেছি তাকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় তার বাবাকে মারধর করে মেরে ফেলা হয়েছে। হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।’
মন্তব্য করুন