ফরহাদ সুমন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৪২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

চট্টগ্রাম কারাগারে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ বন্দি, তীব্র গরমে হাঁসফাঁস

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার। ছবি : সংগৃহীত
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার। ছবি : সংগৃহীত

চট্টগ্রাম নগরীসহ জেলা-উপজেলা থেকে গ্রেপ্তার আসামিদের পাঠানো হয় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে। কারাগারে বন্দি ধারণক্ষমতা ২ হাজার ২৪৯ জনের। অথচ বর্তমানে কারাগারে প্রায় পাঁচ হাজার বন্দি রয়েছে। এতে তীব্র গরমে বন্দিদের এখন হাঁসফাঁস অবস্থা। সেলগুলোয় গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে তাদের। বন্দিদের নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হয় কারারক্ষীদের।

জানা যায়, ১৮৮৫ সালে চট্টগ্রাম নগরীর লালদীঘি পাড় সংলগ্ন স্থানে ১৪ দশমিক ৪০ একর জায়গায় চট্টগ্রাম জেলা কারাগার স্থাপন করা হয়। পরে ১৯৯৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর উন্নীত করা হয় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে। এখনো নতুন কোনো কারাগার নির্মাণ করা হয়নি।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রথম পর্যায়ে কারাবন্দিদের রাখার জন্য পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা নামে ৩টি ভবন নির্মাণ করা হয়। প্রতিটিতে বন্দি রাখার ধারণক্ষমতা ৩০০ জন। পরে সময়ে বন্দির চাপ বেড়ে যাওয়ায় সাংগু, কর্ণফুলী ও হালদা নামে আরও ৩টি ভবন নির্মাণ করা হয়। এগুলোর প্রতিটিতে বন্দি রাখার ধারণক্ষমতা ২৪০ জন।

জামিনে মুক্ত হয়ে আসা অনেক হাজতি আসামি জানান, জেলখানায় উপচে পড়ছে বন্দি। গাদাগাদি করে থাকতে হয়েছে। খাবারের মানও তেমন ভালো নয়। বাইরের চাইতে ভেতরে জিনিসিপত্রের দাম বেশি। পিসিকার্ডে টাকা জমা থাকলে শুকনো খাবার, বিড়ি, সিগারেট ইত্যাদি ক্রয় করা যায়। যাদের পিসিকার্ড নেই তারা কারাগারের খাবারের ওপর নির্ভর।

কারামুক্ত তারু মিয়া কালবেলাকে বলেন, যাদের টাকা-পয়সা আছে তাদের জন্য কারাগার ঘরবাড়ির মতো। অন্যান্য হাজতির মতো থাকা, খাওয়া, গোসল ইত্যাদির কোনো কষ্ট নেই। ডিভিশন ও মেডিকেল নামে ওয়ার্ডগুলোয় আরাম আয়েশে থাকেন। নিজেরা বাজার-সদাই করে হাজতিদের হাতে রান্নাবান্না করিয়ে নেন। অন্য সাধারণ ওয়ার্ডের বেহাল দশা। গাদাগাদি করে থাকতে হয়। বাথরুমের বেহালদশা। গোসলের পানিও কম। ইলিশ ফাইলে ১০ জন বন্দির কক্ষে ঘুমাতে হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ বন্দিকে। সব মিলিয়ে বন্দিদের হাঁসফাঁস অবস্থা।

এক কারা কর্মকর্তা জানান, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় পুলিশের বিশেষ অভিযানে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ গ্রেপ্তার হচ্ছে। আর এসব মানুষ আদালত হয়ে প্রবেশ করছে চট্টগ্রাম কারাগারে। যে হারে প্রতিদিন কারাগারে বন্দি বাড়ছে সেই হারে জামিন মিলছে না। কারাগারে প্রতিদিন বাড়ছে বন্দির সংখ্যা। গত ৫ আগস্টের পর অনেক দাগি আসামি, রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা ছাড়া পেয়েছেন।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বুধবার জেল রোডের চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের কনফারেন্স রুমে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কয়েদিদের মাঝে পোশাক, ওষুধসহ বিভিন্ন উপহারসামগ্রী বিতরণকালে কারাগারে কয়েদিদের অতিরিক্ত চাপ মন্তব্য করেছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।

তিনি বলেন, কারাগারে কয়েদিদের অতিরিক্ত চাপ। আমি দেখেছি প্রতিটি রুমে কয়েদিদের থাকার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ জায়গা থাকে না। ৩০ থেকে ৪০ জনের জায়গায় ১০০ জন রাখা হয়। এটা অমানবিক। কয়েদিদের নির্দিষ্ট পরিমাণ থাকার জায়গা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ ছাড়া, গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কারণে কারাগারে চাপ আরও বেড়ে যায়। ফলে বন্দিদের জন্য পর্যাপ্ত জায়গার সংকট সৃষ্টি হয়। কারাগারে কয়েদিদের তুলনায় বাথরুমের সংখ্যা অত্যন্ত কম। এতে বন্দিদের নানা ধরনের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বন্দিদের ন্যূনতম মৌলিক অধিকার ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা জরুরি।

তিনি বলেন, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে সবকিছু। কয়েদিদের জন্য একজন ডাক্তারের পাশাপাশি একজন সাইকোলজিস্ট নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। কারণ এখানে আত্মহত্যার অনেক ঘটনা রয়েছে।

জেল কোড অনুযায়ী প্রতি বন্দির জন্য ছয় ফুট দৈর্ঘ্য ও ছয় ফুট প্রস্থের মোট ৩৬ বর্গফুটের জায়গা বরাদ্দ থাকার কথা। সে হিসেবে কারাগারে বন্দি ধারণক্ষমতা ২ হাজার ২৪৯ জনের। এর মধ্যে পুরুষ বন্দি থাকার কথা ২ হাজার ১১৪ জন এবং নারী বন্দি থাকার কথা ১৩৫ জন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঁচ হাজার ছুঁইছুঁই। এদের মধ্যে পুরুষ হাজতি ৩৯৬৭ জন, মহিলা হাজতি ১১১ জন। এ ছাড়া পুরুষ কয়েদি ৬৬৫ জন ও মহিলা কয়েদি ৪০ জন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পুরুষ রয়েছে ১৮০ জন ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৪ জন নারী রয়েছে। মোট বন্দি রয়েছে ৪ হাজার ৯৬৭। পুরো কারাগারে কারারক্ষীর দায়িত্ব পালন করছেন ৩৫০ জন।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ইকবাল হোসেন কালবেলাকে বলেন, কারাগারে ধারণক্ষমতার চেয়ে বন্দির সংখ্যা বেশি। পুরো কারাগারে ৩৫০ জন কারারক্ষী রয়েছেন। প্রায় পাঁচ হাজার বন্দিদের সাড়ে তিনশ কারারক্ষীকে সামাল দিতে হয়। এখানে হাজতি, কয়েদি ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা রয়েছে।

তিনি বলেন, ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি বন্দি থাকায় তাদের অসুবিধা হবে এটা স্বাভাবিক। নতুন কোনো কারাগার নির্মাণ করা হয়নি। জঙ্গলসলিমপুরে নতুন কারাগারের প্রস্তাবনা ছিল। তার কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। নতুন কারাগার স্থানান্তরিত না হওয়া পর্যন্ত বন্দি উপচে পড়ছে। তবে আমাদের সদস্যরা তাদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করছেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ, সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চক্রান্ত!

১৪ ঘণ্টা পর ভেসে উঠল সেই শিশুর মরদেহ

কুমিল্লায় বিএনপি-এনসিপির পাল্টাপাল্টি সমাবেশ, জনমনে আতঙ্ক

আরএসএস প্রচারকরা বিয়ে না করে থাকেন কেন?

নিখোঁজ স্কুলছাত্রের মরদেহ মিলল রেললাইনের পাশে

ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় বজ্রবৃষ্টির শঙ্কা

১৩ ঘণ্টায়ও উদ্ধার হয়নি নালায় পড়ে নিখোঁজ শিশুটি

অপবাদ সইতে না পেরে শরীরে আগুন, ৫ দিন পর যুবকের মৃত্যু

বাণিজ্যযুদ্ধ / চীন নাকি ট্রাম্প, কে কাকে বেশি চাপে রাখছে

দুপুরের মধ্যে ১০ জেলায় ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস

১০

চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ও ছাত্রদলের পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ

১১

পাকিস্তানজুড়ে কেএফসিতে হামলা, গ্রেপ্তার ১৭৮

১২

‘পার্বত্য মন্ত্রণালয়গুলো প্রকৌশল বেইসড হয়ে গেছে, পরিবর্তন আনা হবে’

১৩

সীমান্তে ১২ কেজি রুপার গয়না ফেলে ভারতে পালাল পাচারকারী

১৪

ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এনসিপির বৈঠক আজ

১৫

ট্রাম্প কি এবার ইউক্রেনকে ঝুঁকিতে ফেলছেন?

১৬

১৯ এপ্রিল : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১৭

আরও ৬৪ মৃত্যু / গাজায় এখনই খাদ্য প্রয়োজন: ডব্লিউএফপি

১৮

শনিবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

১৯

১৯ এপ্রিল : টিভিতে আজকের খেলা

২০
X