আমন মৌসুমে চাল সরবরাহে সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেনি দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার ৪০ চালকল। এ কারণে তাদের নিবন্ধন বাতিল করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে খাদ্য বিভাগ। একই সঙ্গে তাদের বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করা হবে বলে জানা গেছে।
এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে ব্যবসায়ীরা জানান, চলতি মৌসুমে সরকারি দরের চেয়ে বাজারদর ছিল বেশি। লোকসানের আশঙ্কায় অনেক চালকল মালিক চুক্তিবদ্ধ হননি। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে এমন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া ঠিক হয়নি।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আমন মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহের সময় শেষ হয়েছে। গত বছরের ১৭ নভেম্বর শুরু হয়েছিল এ অভিযান। এ মৌসুমে ৩ হাজার ২৫৮ দশমিক ৩৩০ টন সেদ্ধ চাল, ৭৯৫ টন আতপ চাল এবং ১ হাজার ২৫৮ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। সেদ্ধ ও আতপ চাল সংগ্রহ অভিযান শতভাগ সফল হয়। তবে ধান এসেছে ১ টন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, উপজেলার মোট ১২৭ নিবন্ধিত চালকলের মধ্যে ১২টি অটো চালকল রয়েছে। বাকি সব হাসকিং চালকল। সরকার আমন মৌসুমে তাদের কাছ থেকে সংগ্রহের জন্য ৩৩ টাকা কেজিতে ধান, ৪৭ টাকা কেজিতে সেদ্ধ চাল এবং ৪৬ টাকা কেজিতে আতপ চাল কেনার দর নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু এই দরের চেয়ে বাজারে ধান-চালের দাম বেশি ছিল। যে কারণে কৃষক শুরু থেকেই খাদ্যগুদামে ধান দিতে অনাগ্রহী ছিলেন। খাদ্য বিভাগের নিবন্ধন রক্ষায় ৬১ চালকলের মালিকরা নিশ্চিত লোকসান জেনেও গুদামে চাল সরবরাহ করেছেন।
আমন মৌসুমের শুরু থেকে বাজারে ধান-চালের দাম বেশি থাকায় ৪০টি চালকল মালিক লোকসানের ভয়ে সরকারের সঙ্গে চাল সরবরাহের চুক্তি করেননি। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে একাধিকবার তাগিদ দিয়েও তাদের চুক্তির আওতায় আনা যায়নি।
চুক্তির বাইরে থাকা ফুলবাড়ী পৌর এলাকার একাধিক চালকল মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এবার চুক্তি করলে কেজিতে ৫ থেকে ৬ টাকা লোকসান গুনতে হতো। ব্যবসার তহবিলই গায়েব হতো। একই সঙ্গে দেনায় পড়ে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে বাড়িঘর সব চলে যেত। এসব ভেবেই এবার চাল সরবরাহের চুক্তি করেননি তারা। শুনেছেন তাদের বিরুদ্ধে খাদ্য বিভাগ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে খাদ্য বিভাগে নিবন্ধন বাতিল করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। নিবন্ধন যখন বাতিল করবে, তখন বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করবে। দুদিন আগে হোক আর পরে।
উপজেলার নূরপুর এলাকার নূরপুর হাসকিং মিলের মালিক আবুল কালাম আজাদ বলেন, তার মিলের নামে বরাদ্দ করা ৮ দশমিক ৫৮০ টন চাল সরকারকে দেওয়ার জন্য চুক্তি করেছিলেন। লোকসান জেনেও পুরো বরাদ্দের চাল খাদ্যগুদামে সরবরাহ করেছেন। শুধু নিবন্ধন রক্ষার জন্যই তাকে লোকসান গুনে গুদামে চাল দিতে হয়েছে।
সরকারি এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেন চুক্তির বাইরে থাকা উপজেলার মাদিলাহাট এলাকার এসবি হাসকিং মিলের মালিক সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, আসলে বলার কিছু নেই। চাল সরবরাহ করতে আমরা সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ না হওয়ায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সরকারের বেঁধে দেওয়া দরের চেয়ে মৌসুমের শুরু থেকেই বাজারে ধান-চালের দাম অনেক বেশি। আমরা কিনতে না পারলে সরকারকে সরবরাহ করব কোথা থেকে? এ বছর দিতে পারিনি, আগামীতে দেব। তাই বলে কি আমাদের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে?
উপজেলার চকচকা গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, গুদামে ধান দিতে গেলে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। এবার সরকারি গুদামের চেয়ে বাজারে ধানের দাম অনেক বেশি। তাই সব ধান বাজারেই বিক্রি করেছি।
উপজেলা চাল কল মালিক সমিতির সভাপতি সামসুল হক মণ্ডল বলেন, লোকসান জেনেও সবাই ব্যবসা করতে চাইবে না। ৪০টি চালকলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এমন কথা শুনেছেন। এ ব্যাপারে করণীয় বিষয়ে সমিতিই সিদ্ধান্ত নেবে।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সোহেল আহম্মেদ বলেন, আমন মৌসুমে ৪০ জন চালকলের মালিক চাল সরবরাহের জন্য চুক্তি করেননি। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী এসব চালকলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে তালিকা এলে সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন