রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের ওপর হামলার ঘটনায় হাসপাতাল স্টাফদের তিনদিনব্যাপী চলমান কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটে এ কর্মবিরতি তুলে নেওয়া হয়। এর আগে গত শুক্রবার (১১ এপ্রিল) এক চিকিৎসককে মারধর ও গালিগালাজের ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করে কর্মবিরতিতে যান হাসপাতাল কর্মীরা।
অন্যদিকে, হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ রেখে কর্মবিরতি পালন করায় সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হয়। এ কারণে মঙ্গলবার তারাগঞ্জ উপজেলার সর্বস্তরের জনগণ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। তারা স্বাস্থ্যসেবায় অনীহা, রোগীদের হয়রানি এবং চিকিৎসা বিলম্বের প্রতিবাদ জানান।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর জেলা কমিটির আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ, সদস্য সচিব ডা. জামিল হোসেন, মুখ্য সংগঠক রিফাত হাসান, সদস্য আল-আমিন আকাশ, তারাগঞ্জের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী একরামুল হক, স্থানীয় বাসিন্দা রাতুল আহমেদ ও আব্দুস সামাদ প্রমুখ।
আন্দোলনের আহ্বায়ক মো. ইমরান অভিযোগ করে বলেন, তারাগঞ্জ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি মিথ্যা অভিযোগকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত করছে। তিনি দাবি করেন, একটি ছোট ঘটনার পর ডাক্তারদের অপেশাদারত্ব ও অপকর্ম ঢাকতেই তারা থানায় মামলা করে এবং সেনাবাহিনী ব্যবহারেরও চেষ্টা করা হয়।
ব্যবসায়ী একরামুল হক বলেন, তারাগঞ্জ দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা হওয়ায় প্রতিনিয়ত আহত রোগী আসেন হাসপাতালে। কিন্তু ডাক্তার ও সেবার অভাবে সাধারণ মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছেন না। তিনি সিভিল সার্জনের প্রতি সেবার মান উন্নয়নের আহ্বান জানান।
ছাত্র সমন্বয়ক আল-আমিন বলেন, ডাক্তারদের সঙ্গে একাধিকবার সমঝোতার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু তারা কর্মবিরতিতে অটল ছিলেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, সাধারণ মানুষের কী অপরাধ? তারা কেন সেবা থেকে বঞ্চিত হলো? এ ব্যাপারে জবাব না পেলে ভবিষ্যতে মানহানির মামলা করারও হুশিয়ারি দেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. অনির্বাণ মল্লিক জানান, রংপুরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সিভিল সার্জন হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মাসব্যাপী পুলিশি প্রহরা ও স্থায়ী আনসার মোতায়েনের অনুরোধ জানানো হয়েছে। রংপুর জেলা পুলিশ সুপার মো. আবু সাইম বলেন, ‘ঘটনার তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সত্যকে সত্য এবং মিথ্যেকে মিথ্যা বলার দায়িত্ব সাংবাদিকদের। আমি এসপি সাইমও যদি অপরাধ করি সেটাও তুলে ধরবেন।’
জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল বলেন, ‘চিকিৎসকরা জনগণের সেবায় নিয়োজিত। কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে তারা আবারো স্বাস্থ্যসেবা চালু করেছেন।’
এর আগে ১২ এপ্রিল তারাগঞ্জে চিকিৎসকের উপর হামলার অভিযোগ নিয়ে ‘তারাগঞ্জে ডাক্তারের ওপর সমন্বয়কের হামলার অভিযোগ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।
মন্তব্য করুন