ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেছেন, বাংলাদেশের শিল্প খাতে জ্বালানি একটি প্রধান সমস্যা। অপ্রতুল জ্বালানি এবং জ্বালানির দাম নিয়ে স্থিতিশীল কোনো নীতি না থাকার কারণে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা দ্বিধাগ্রস্ত থাকে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি সরকার বিনিয়োগ সম্মেলন করল। সেখানে নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণ করার নানা চেষ্টা করা হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে সরকারের উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই। অথচ এখন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) নতুন শিল্পের জন্য গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বাড়িয়েছে, যা বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে সরকারের সদিচ্ছাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) মাগুরার শালিখা উপজেলায় এক গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মুফতি রেজাউল করিম বলেন, গ্যাসের দাম নির্ধারণের এই বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত নতুন শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করবে। একই খাতে ব্যবসারত পুরোনো কারখানা কম দামে গ্যাস পাবে। নতুন কারখানাকে বাড়তি দাম দিতে হবে। ফলে নতুনরা পুরোনোদের সঙ্গে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে বিপাকে পড়বেন।
তিনি বলেন, ব্যবসার ক্ষেত্রে নীতির ধারাবাহিকতা থাকা আবশ্যক। নীতি অনিশ্চয়তা বিনিয়োগ সিদ্ধান্তকে দ্বিধাগ্রস্ত করে। ফলে নতুন শিল্পের জন্য ৩৩ শতাংশ দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে হবে এবং ব্যবসা সংক্রান্ত নীতিতে ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে।
ইসলামী আন্দোলন শালিখা উপজেলা আন্দোলনের সভাপতি মাওলানা উসমান গনী সাঈফির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে চরমোনাই পীর সংস্কার কার্যক্রমকে গতিশীল করে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির তাগিদ দিয়ে বলেন, নির্বাচন লাগবে তবে জরুরি সংস্কার সম্পন্ন না করে নির্বাচন দিলে দেশ আবারও আগের পংকিলতায় নিপতিত হবে। তাই সংস্কার কার্যক্রমকে গতিশীল করতে হবে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির বলেন, দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এখনো পরিবর্তন হয় নাই। চাঁদাবাজি, দখলদারি, পেশিশক্তির প্রদর্শন এখনো বিদ্যমান। কারা এগুলো করছে তা আমরা সবাই জানি। জনপ্রশাসনসহ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোতে পতিত স্বৈরাচারের রেশ এখনো আছে। এই অবস্থায় নির্বাচনকে মূখ্য করে তোলার কোনো কারণ নাই। বরং সংস্কার করে ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী রাষ্ট্রকাঠোমো নিশ্চিত করেই নির্বাচনে যেতে হবে।
তিনি জনতার প্রতি আহ্বান রেখে বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৪ বছরে বহু শাসক আমরা দেখেছি। বহু নীতিও আমরা দেখেছি। আমাদের কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্র আমরা পাই নাই। এবার ইসলামকে ক্ষমতায় নিতে হবে। ইসলামপন্থি সবাই এবার আসনভিত্তিক একক প্রার্থী দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আপনারা যে দলই করেন না কেন এবার দেশের স্বার্থে ইসলামকে ক্ষমতায় আনতে কাজ করুন। ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশ কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছবেই।
শালিখা বুনাগাতী ডিগ্রি কলেজ মাঠের গণসমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- সংগঠনের মাগুরা জেলা সভাপতি মুফতি মোস্তফা কামাল, জেলা সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান, সহসভাপতি মাওলানা মশিউর রহমান এবং নাজিরুল ইসলাম।
এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নিয়মিত বৈঠকে দেশ ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষণ করে ভারতের ওয়াকফ বিলের বিতর্কিত পরিবর্তন ও অব্যহত মুসলিম নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয়। একইসঙ্গে ওয়াকফ বিলের বিতর্কিত পরিবর্তন বাতিল ও মুসলিম নির্যাতন বন্ধের দাবিতে আগামী ২৬ এপ্রিল বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ থেকে গণমিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম গণমিছিলে নেতৃত্ব দেবেন।
মঙ্গলবার দলের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমাদের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, আহমাদ আব্দুল কাইয়ুমসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
মন্তব্য করুন