সাদুল্লাপুর (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০২:০৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ঝড়ে উড়ে গেল ভূমিহীনের ঘর, নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই

উড়ে যাওয়া ভাঙা ঘরে নির্বাক চোখে তাকিয়ে ছিলেন ভূমিহীন মুক্তা রানী। ছবি : কালবেলা
উড়ে যাওয়া ভাঙা ঘরে নির্বাক চোখে তাকিয়ে ছিলেন ভূমিহীন মুক্তা রানী। ছবি : কালবেলা

নিভৃত অঞ্চলের বাসিন্দা মুক্তা রানী (৪৬)। হয়েছেন স্বামী থেকে বিচ্ছিন্ন। নিজের নেই থাকার জায়গা। আশ্রয় নিয়েছেন অন্যের ভিটায়। সেখানে একটি জরাজীর্ণ ঘরে সন্তান নিয়ে বসবাস। কাটে দুর্বিষহ জীবনযাপন। এরই মধ্যে ঝড় হাওয়ায় উড়ে গেছে তার সেই ঘরের চালা। এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস এই ভূমিহীনের।

সম্প্রতি কালবৈশাখী ঝড়ে এমনি চিত্র দেখা গেছ গাইবান্ধার ধাপেরহাট ইউনিয়নের বোয়ালীদহ গ্রামে। উড়ে যাওয়া ভাঙা ঘরে নির্বাক চোখে তাকিয়ে ছিলেন ভূমিহীন মুক্তা রানী। চরম হতাশায় চারপাশ যেন অন্ধকার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বোয়ালীদহ গ্রামের মৃত নছির উদ্দিনের মেয়ে মুক্তা রানী। তরুণী বয়সে বিয়ে হলেও সে সংসার টেকেনি তার। এরপর কয়েক বছর পর ফের বিয়ে হয় পাশের উপজেলার ভেন্ডাবাড়ি এলাকায়। সেখানে কোলজুড়ে জন্ম হয় একটি ছেলে সন্তান। এরই মধ্যে দ্বিতীয় এ স্বামী আরেকটি বিয়ে করেন। তখন থেকে স্বামী বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকছেন বাবার গ্রামের এলাকায়। পৈতৃক সূত্রে কোনো সহায়সম্বল বা জমিজমা না থাকায় আশ্রয় নেন অন্যের জমিতে। সেখানে একটি মাটির ঘর স্থাপন করে একমাত্র ছেলেকে (৪) নিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। তবে বাঁশঝাড়ের মধ্যে এ বাড়িতে নেই কোনো টিউওবয়েল ও টয়লেট সুবিধা। আর বিদ্যুৎবিহীন ভূতুড়ে বসবাস। জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে কখনো পাননি কোনো সহায়তা।

আরও জানা গেছে, জীবিকার তাগিদে বিক্রি করেন কচুশাক। যে শাক রাস্তার ধারে অযত্নে অবহেলায় বড় হয় সেই শাক সংগ্রহ করে বিভিন্ন হাট-বাজার ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিক্রি করেন মুক্তা রানী। এ থেকে কোনোমতে জীবিকা চলে তার। কোলের শিশুকে নিয়ে সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে ঘরে একটু ভালোভাবে ঘুমাবেন তাও হয় না। জঙ্গলের ভেতরে জরাজীর্ণ ঘরে নির্ঘুম রাত কাটে এই ভূমিহীন নারীর। কয়েক দিন আগে রাতের বেলায় হঠাৎ তুফান এসে সবকিছু তছনছ করেছে। উড়ে গেছে সেই মাটির ঘরের চালা। এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস। সন্তানকে নিয়ে বেড়েছে আরও দুর্দশা। বৈশাখের বৃষ্টিতে রাত্রিযাপন করতে হচ্ছে ভেজা বিছানায়। আর সন্তান নিয়ে শরীর ভিজে জবুথবু হয়ে থাকছেন এই ভূমিহীন। নেই খাবারের ব্যবস্থাও। এখন কি হবে, কই যাবে, সব শেষ হয়ে গেছে তার।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মুক্তা রানী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, স্বামী ছাড়া হয়ে সন্তানকে নিয়ে আশ্রয়হীন হয়ে খেয়ে না খেয়ে জীবনযাপন করছি। অন্যের জমিতে একটি ঘর তুলে বসবাস করতাম। সেটাও আবার বাতাসে দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। এখন পর্যন্ত মেলেনি প্রশাসনের কিংবা জনপ্রতিনিধিদের সহায়তা। সরকারিভাবে আমাকে একটি যদি আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দিত তাহলে কিছুটা আরামে থাকতে পারতাম।

ধাপেরহাট ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য জিল্লুর রহমান জানান, মুক্তা রানীর ঘরের চালা উড়ে গেছে সেটি জানা নেই তার। খতিয়ে দেখে তাকে সহযোগিতার চেষ্টা করবেন।

সাদুল্লাপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ময়নুল হক বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মুক্তা রানীর ব্যাপারটি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে খোঁজ নেওয়া হবে। সম্ভব হলে তাকে সহযোগিতা করা যেতে পারে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির বৈঠক আজ

বিয়ের দাবিতে প্রেমিকার অবস্থান নিয়ে সংঘর্ষে আহত যুবকের মৃত্যু

প্যারিসে নানা আয়োজনে উদ্‌যাপিত হলো বাংলা নববর্ষ ১৪৩২

আগুন আতঙ্কে ট্রেন থেকে দম্পতির লাফ, কোলে থাকা শিশুর মৃত্যু

ভারতে ২৪ বাংলাদেশি নারী-পুরুষ গ্রেপ্তার

বুধবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

ট্রাম্পের দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসছেন আজ

১৬ এপ্রিল : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১৬ এপ্রিল : আজকের নামাজের সময়সূচি

গাজায় ইসরায়েলি হামলার সবশেষ পরিস্থিতি 

১০

দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ওয়ার্ড বিএনপির সম্মেলন পণ্ড

১১

ইরান-যুক্তরাষ্ট্র / এই বাঘ-বন্দি খেলায় জিতবে কে?

১২

অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনের কাছাকাছি গিয়ে ভিলার স্বপ্নভঙ্গ

১৩

ডর্টমুন্ডের কাছে হারের পরও সেমিতে বার্সা

১৪

দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বে সিলেটে ছাত্রলীগ কর্মী নিহত

১৫

হাসপাতালে সেবা বন্ধে জনদুর্ভোগ, পরে কর্মবিরতি প্রত্যাহার

১৬

ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ৪ কোটি টাকা আদায়ের অভিযোগ

১৭

কুয়েটে ৩৭ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারাদেশ পুনর্বিবেচনার আহ্বান ছাত্রদলের

১৮

ঢাবিতে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

১৯

হ্যাটট্রিক জয়ে বিশ্বকাপের আরও কাছে বাংলাদেশ নারী দল

২০
X