জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ঢাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত মাদ্রাসাছাত্র শহীদ রাব্বির (১২) মরদেহ ৯ মাস পর নিজ গ্রামে পুনরায় দাফন করা হয়েছে। এর আগে তার লাশ মিরপুর দাফন করা হয়েছিল।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) ভোররাতে রাব্বির মরদেহ তার নিজবাড়ি পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়া ৮ নম্বর ওয়ার্ডের চৌরাস্তা এলাকায় এসে পৌঁছে। বেলা সাড়ে ১১টায় বাড়ির সামনে মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
গলাচিপা থানার ওসি মো. আসাদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শহীদ মো. রাব্বি মাতব্বর ওই গ্রামের জুয়েল মাতব্বরের ছেলে। সে ঢাকার মিরপুর এলাকার তা’লীমুল ইসলাম মাদ্রাসার হাফেজির ছাত্র ছিল।
শহীদ রাব্বির বাবা জুয়েল মাতব্বর জানান, তার তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে ছোট ছেলে রাব্বি মাতব্বর মিরপুরের তা’লীমুল ইসলাম মাদ্রাসার হাফেজির ছাত্র থাকা অবস্থায় ১০ পারা কোরআন মুখস্থ করেছিল। ঘটনার দিন ১৯ জুলাই শুক্রবার রাত ৮টার দিকে নিজ মাদ্রাসার কাছাকাছি ঢাকা মডেল কলেজের সামনে ছাত্র-জনতার মিছিল যাচ্ছিল। এ সময় রাব্বিসহ মাদ্রাসার কিছু ছাত্র সেখানে উপস্থিত হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ মিছিলকারীদরে উপর গুলি শুরু করে। এ সময় অন্য ছাত্রদের সঙ্গে রাব্বিও দৌড়ে পালিয়ে গিয়ে রাস্তার পাশে একটি ভ্যান গাড়ির নিচে আশ্রয় নেয়। এ সময় পুলিশের একটি গুলি রাব্বির বুকে বিদ্ধ হয় এবং মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে রাব্বির লাশ ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু জনতার প্রতিবাদে সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। স্থানীয় জনগণ রাব্বির মরদেহ স্থানীয় আজমল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি জানান, ওইদিন রাতেই তিনি তার ছেলের লাশ নিজ বাড়ি পটুয়াখালীর গলাচিপায় নিয়ে আসতে চাইলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বাধা দেন এবং উল্টো তাকে হুমকি দেন। ছেলে কেন মিছিলে গেল এ জন্য তার বিরুদ্ধে মামলা হবে বলে ভয়ভীতি দেখান। পরবর্তীতে বাধ্য হয়ে তিনি তার ছেলের লাশ ঢাকায় মিরপুর গোরস্তানে দাফন করেন।
পরবর্তীতে ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পরে এ ঘটনায় মামলার পাশাপাশি শহীদ রাব্বির মরদেহ নিজ জেলা পটুয়াখালীতে নেওয়ার জন্য জুয়েল মাতব্বর আদালতে আবেদন করেন। এরপর আদালতের নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে গত ১০ এপ্রিল শহীদ রাব্বির মরদেহ মিরপুর কবরস্থান থেকে উঠিয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়।
এদিকে রোববার (১৩ এপ্রিল) হাসপাতালের হিমাগার থেকে রাব্বির মরদেহ মর্গে পোস্টমর্টেমসহ ডিএনএর নমুনা সংগ্রহ করা হয় ও রাতে শহীদ রাব্বির মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রাতেই রাব্বির মরদেহ নিয়ে স্বজনরা পটুয়াখালীর নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
অন্যদিকে শহীদ রাব্বি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে ঢাকার কাফরুল থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। মামলায় হুকুমদাতা হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২০০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে বলে জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাফরুল থানার উপপরিদর্শক মো. বাশার।
মন্তব্য করুন