তালতলী উপজেলার কড়াইবাড়িয়া বাজারের ১৮টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, চারটি বসতঘর ও একটি পিকআপ আগুনে পুড়ে গেছে। এতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অন্তত সাড়ে ৩ কোটি টাকার। স্থানীয়দের অভিযোগ ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পুড়ে গেছে। তারা ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের শাস্তি দাবি করেছেন।
রোববার (১৩ এপ্রিল) রাত সোয়া ১২টার দিকে কড়াইবাড়িয়া বাজারে এ ঘটনা ঘটে। বাজারের বশির খাঁনের তেলের দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়।
কড়াইবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ইব্রাহিম সিকদার পনু দাবি করেছেন, আগুনে অন্তত সাড়ে ৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সফিউল আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীকে নগদ ১৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের বরাতে জানা গেছে, তালতলী উপজেলার কড়াইবাড়িয়া বাজারে রোববার রাত সোয়া ১২টার দিকে বশির খাঁনের তেলের দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তের মধ্যে আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে তালতলী ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে আসে। কিন্তু তারা মেশিনের তেল নিয়ে না আসায় এক ঘণ্টা মেশিন চালু করতে পারেনি। ততক্ষণে বাজারের বেশকিছু ঘর পুড়ে গেছে। পরে আমতলীর ফায়ার সার্ভিস কর্মী ও স্থানীয়রা দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষণে বাজারের মোসা. পানু, মাজেদা বেগম, সবুজ প্যাদা, রাব্বি প্যাদার বসতঘর এবং মিজান আকন, ফয়সাল, নির্মল শীল, কাইয়ুম মৃধা, মনির শীল, নাশির খাঁন, খবির টেইলার্স, হানিফ হাওলাদার, ছত্তার হাওলাদার, ফারুক ঘরামী, বশির খাঁন, হারেস খাঁন, মহিবুল্লাহ, আলমগীর প্যাদা, হানিফ সিকদার , হাবিব মোল্লা, রহিম কাজী ও সবুজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। একই সময়ে বাজারের পাশে সাইফুল খাঁনের একটি পিকআপ গাড়ি ছিল সেটিও পুড়ে গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ফায়ার সার্ভিসের গাফিলতির কারণে বাজারের এতগুলো ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তারা ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের শাস্তি দাবি করেছেন।
ব্যবসায়ী বশিন খাঁন বলেন, ‘জীবনে যা আয় করেছি। তা এক নিমিষে শেষ হয়ে গেল। আর কিছুই রইল না। পরিবার-পরিজন নিয়ে এখন পথে বসতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমার দোকানে ১৬ ব্যারেল পেট্রোল, দুইশ বস্তা চাল ও ক্যাশ বাক্সে চার লাখ টাকা ছিল। তা সমুদয় পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।’
হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী মহিবুল্লাহ বলেন, ‘অন্তত অর্ধকোটি টাকার মালামাল পুড়ে গেছে। ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো পথ নেই। তালতলী ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের মেশিন চালু করতে এক ঘণ্টা লেগেছে। ততক্ষণে সব পুড়ে গেছে। আমতলী ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা না আসলে বাজারের কিছুই থাকত না। তালতলী ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের শাস্তি দাবি করেন তিনি।
কাপড় ব্যবসায়ী মিজান আকন বলেন, ‘দোকানের সব পুড়ে চাই হয়ে গেছে। দোকানে অন্তত ৫০ লাখ টাকার মালামাল ছিল। এখন কিছুই নেই।’
বাজারের আরেক কাপড় ব্যবসায়ী নাশির খাঁন বলেন, ‘কালকে ছিলাম ধনী আজকে আমি ফকির। আমার কিছুই রইলো না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের গাফলতির কারণে বাজারের এতবড় সর্বনাশ হয়েছে। আমি ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের শাস্তি দাবি করছি।’
তালতলী ফায়ার সার্ভিস লিডার এসএম নুরুজ্জামান আগুন নেভাতে গাফলতির কথা অস্বীকার করে বলেন, স্থানীয়রা কাছে পানি থাকা সত্ত্বেও দূরে পাইপ বসিয়েছে, ফলে কিছু সমস্যা হয়েছে। তবে কেন এক ঘণ্টার আগে মেশিন চালু করতে পারলেন না এমন প্রশ্নের জবাব দিতে পারেনি তিনি।
আমতলী ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যার হাউস ইন্সেপেক্টর মো. হানিফ বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। আগুনের লাগার কারণ চিহ্নিত করা যায়নি। তদন্ত করে প্রকৃত কারণ চিহ্নিত করা হবে।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে সালমা বলেন, খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে নির্দেশনা দিয়েছি। স্থানীয়রা তালতলী ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের গাফলতির অভিযোগ দিয়েছেন। তদন্তসাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সফিউল আলম বলে, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আপাতত প্রত্যেক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীকে নগদ ১৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন