ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বৈশাখী মেলা আয়োজনকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে উত্তেজনা ও প্রশাসনিক টানাপড়েন। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, কাফনের কাপড় পরার প্রয়োজন হলেও এই মাঠে বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত হবেই। যুগের পর যুগ ধরে এখানে মেলা হচ্ছে, কেউ তা বন্ধ করতে পারবে না।
শনিবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে মাঠ পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
এসময় তিনি বলেন, বিগত সরকারের আমলে এই মাঠে মেলার আয়োজন করা যায়নি। ফ্যাসিস্ট সরকারের শাসনামলে আমাদের এ মাঠে বৈশাখী আনন্দ পালন বন্ধ ছিল। এখন খুনি হাসিনা নেই, আমরা মুক্ত। এ মাঠে আনন্দ হবে, মেলা হবে।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আরও বলেন, ১৮৪২ সাল থেকে মাঠটি ‘বিটি মাঠ’ নামে পরিচিত। কিন্তু পূর্বতন সরকারের সময় সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ক্ষমতার অপব্যবহার করে মাঠটির নাম পরিবর্তন করে তার পিতার নামে রাখেন। বর্তমানে এটি ক্রীড়া উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে চলে গেছে, যা আমাকে হতাশ করেছে।
তবে মাঠটি বর্তমানে একটি খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কর্পোরেট ঢাকা লীগ টুর্নামেন্ট চলমান রয়েছে এবং ১৪ এপ্রিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) একটি ম্যাচও এ মাঠে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ক্রিকেটার জামিল মহসিনসহ কয়েকজন খেলোয়াড় অভিযোগ করেন, মেলার জন্য স্টল ও মঞ্চ নির্মাণে খেলার বিঘ্ন ঘটছে।
এ পরিস্থিতিতে বিষয়টি কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের নজরে আসলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিনাত ফৌজিয়ার নির্দেশে সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন ও জান্নাতুল মাওয়া মাঠে উপস্থিত হয়ে মেলা বন্ধের নির্দেশ দেন।
বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছি। কাফনের কাপড় পরে হলেও মেলা করব।
ঢাকা জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদ জানান, স্টেডিয়ামে মেলার আয়োজনের কোনো অনুমতি প্রশাসন থেকে দেওয়া হয়নি। আবেদন পাওয়া গেছে, তা পুলিশ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তবে ইউএনও রিনাত ফৌজিয়া জানান, প্রাথমিকভাবে বিএনপির আবেদনের প্রেক্ষিতে মেলার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে উপরের নির্দেশে সেই অনুমতি বাতিল করা হয়েছে।
ঘটনাস্থলে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী, কেরানীগঞ্জ থানা বিএনপির নেতারা এবং প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তেঘরিয়া বিটি মাঠে বৈশাখী মেলা আয়োজনকে কেন্দ্র করে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, তা এখন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দিক থেকে একটি আলোচিত ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। মাঠটি কি উৎসবের প্রাণ হয়ে উঠবে, নাকি খেলার ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে— সেটাই এখন দেখার বিষয়।
মন্তব্য করুন