প্রায় পরিত্যক্ত ভাঙা একটি কাঁচাঘর। পায়ে শিকল পরা অবস্থায় মাটিতে বসে দিন কাটছে বাবুল বৈষ্ণবের। পাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ওষুধের পাতাগুলো যেন নিঃশব্দে চিৎকার করে জানান দিচ্ছে তার অসহায়ত্বের। কোথাও যাওয়ার উপায় নেই, ঠিকমতো জোটে না খাবারও। চরম এই অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছে হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জের বদলপুর ইউনিয়নের ঝিলুয়া গ্রামে। পারিবারিক কলহের জেরে পাগলের তকমা দিয়ে নিজ ঘরেই বাবুল বৈষ্ণবকে (৫০) শিকলবন্দি করে রেখেছেন তার স্বজনরা। স্থানীয়দের ভাষ্য, বাবুল মোটেও মানসিক ভারসাম্যহীন নন।
ভুক্তভোগী বাবুল বৈষ্ণব জানান, ছোট একটি ঘটনা নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে কথাকাটাকাটি হয়। এ সময় তিনি স্ত্রীর গায়ে হাত তোলেন। এ ঘটনার পর তার স্ত্রী, ছেলে ও কাকা মিলে তাকে মারধর করে। এক পর্যায়ে পাগলের তকমা দিয়ে নিজের ঘরে শিকলবন্দি করে রাখে।
তিনি বলেন, ‘আমি একেবারে সুস্থ মানুষ। কোনো মানসিক সমস্যা নেই আমার। শুধু পারিবারিক ঝগড়ার কারণে ছেলে, স্ত্রী আর কাকা মিলে আমাকে বেঁধে রেখেছে। ঠিকমতো খাবার দেয় না। আমার বৃদ্ধা মা মাঝেমধ্যে কিছু খাবার দিলে তাকেও গালাগাল করা হয়। মাঝেমধ্যে খাবারের থালা মায়ের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে ফেলে দেয়। আধা বালতি পানি দিয়ে গত ২০ দিনে মা আমাকে তিন-চার দিন গোসল করিয়েছে। অথচ কোনোদিন কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করিনি।’
বাবুল বলেন, ‘সবাই মিলে মারধর করছে। আমার চোখ, বাহুসহ বিভিন্ন স্থান ফুলে গেছে। কিন্তু ওষুধও এনে দেয়নি। আমার মা কিছু ওষুধ এনে দিয়েছে।’
বাবুল দাবি করেন, তিনি অনেক কষ্ট করে সংসার চালিয়েছেন। ছেলেমেয়েকে বড় করেছেন। এখনো তিনি কৃষিকাজের বাইরে বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ঘুরে সবজির বীজ বিক্রি করেন।
অভিযুক্ত বাবুলের কাকা রথীন্দ্র চৌধুরী বলেন, ‘সে প্রায়ই পরিবারের লোকজনকে মারধর করে। দা নিয়ে হামলা করতে আসে। যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। তাই তাকে শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে।’
স্থানীয়রা এতে ভিন্নমত পোষণ করেছেন। তাদের দাবি, বাবুল পুরোপুরি সুস্থ। শুধু পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও কলহের জেরে এ অমানবিক পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন তিনি। তাদের মতে, পরিবারের পক্ষ থেকেই তার ওপর দীর্ঘদিন ধরে এমন নির্যাতন চলে আসছে।
বাবুল বৈষ্ণবের ছেলে টিটুর মোবাইল ফোন যোগাযোগ করা হলে, এ বিষয়ে তিনি গণমাধ্যমে কোনো কথা বলবেন না বলে জানান।
ঝিলুয়া গ্রামের স্থানীয় ইউপি সদস্য দিলীপ কুমার চৌধুরী বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানি না। তবে এখন যেহেতু আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারছি, খোঁজ নেব। আমার জানামতে তার আচরণ কিছুটা অস্বাভাবিক হলেও পাগল বলা যাবে না। এমনকি সে কখনো কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে বলেও আমার জানা নেই।’
মন্তব্য করুন