রংপুরের পীরগাছায় এক কৃষকের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, মারপিটের অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল ও শ্রমিকদলের নেতাদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার তাদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী উপজেলার পারুল ইউনিয়নের আনন্দি ধনিরাম গ্রামের কৃষক মোসলিম মিয়া বাদি হয়ে মামলা করেছেন।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) পীরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আলম সিদ্দিকী মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার আসামিরা হলেন- পারুল ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রেজাউল ইসলাম রাজ্জাক, পারুল ইউনিয়ন ছাত্রদল সভাপতি মেহেদী হাসান, ইউনিয়ন যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি শফিউদ্দিন শফি, উপজেলা শ্রমিক দলের সেক্রেটারি এনামুল, আনন্দি ধনিরাম এলাকার মো. আজিজুর রহমান, মো. আবু বকর খাঁন, মো. মামুন, মো. আলম, মো. বিপ্লব, বিরাহিম এলাকার মো. আফজাল হোসেন, মো. আমিনুল, দেউতি এলাকার মো. তাইজুল ইসলাম, মো. আফজাল হোসেন, মো. আজাদ মিয়াসহ অজ্ঞাত ২০-৩০ জন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মোসলিম মিয়ার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জমি নিয়ে প্রতিবেশী আজিজুর খান, আলম খান গংদের দ্বন্দ্ব-বিরোধ চলছে। যা নিয়ে একাধিক মামলা হয়েছে। এর জেরে গত ২৯ মার্চ রাত সাড়ে ১২টার দিকে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রেজাউল ইসলাম রাজ্জাকের নেতৃত্বে ছাত্রদল, যুবদল, শ্রমিকদলের লোকজনসহ আজিজুর গংরা মোসলিমের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। এসময় ভুক্তভোগীদের চিৎকারে স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও থানা পুলিশকে খবর দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিস গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও ততক্ষণে মোসলিমের থাকার ঘরটি সম্পূর্ণরূপে পুড়ে যায়। পরে আসামিরা ঘটনাস্থল থেকে চলে যাওয়ার সময় মোসলিমের খড়ের গাদায় আগুন লাগিয়ে দেয়। এ ঘটনায় তার ভাতিজা আশিকুর রহমান গুরুতর আহত হন। পরে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আরও জানা যায়, ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে মোসলিম মিয়ার ভোগদখলে থাকা জমি বিরোধীপক্ষের দখলে দেওয়ার জন্য বিএনপির লোকজন এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে মোসলিম দাবি করলেও টাকা লেন-দেনের বিষয়টি তিনি লোকমুখে শুনেছেন বলে কালবেলাকে জানান।
কৃষক মোসলিম মিয়া জানান, মামলা দায়েরের পর থেকে বিএনপির লোকজন প্রতিনিয়ত মামলা তুলে নেয়ার জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
অভিযুক্ত বিএনপি নেতা রেজাউল ইসলাম রাজ্জাক অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ঘটনার রাতে আমি সাতদরগা থেকে বাড়িতে গিয়ে জামা-কাপড় পরিবর্তন করার সময় পুলিশ গিয়ে তাদের গাড়িতে করে ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। অথচ আমাকে মামলার আসামি করা হয়েছে। তিনি মনে করেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে হয় তো এটি করিয়েছেন। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন।
পীরগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা বলেন, ঘটনা জানার পরেই আমি খোঁজ-খবর নিয়েছি। ইউনিয়ন সভাপতি রেজাউল এই ঘটনায় জড়িত ছিল না। অন্য কোনো দলীয় নেতাকর্মী জড়িত ছিল কি না, সেটা আমার জানা নেই। তবে এ ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক না কেন পুলিশ তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিক এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
পীরগাছা থানার ওসি নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, বসতবাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের রয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।
মন্তব্য করুন