পঞ্চগড় সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের জয়ধরভাঙ্গা এলাকা থেকে একটি বিলুপ্ত প্রজাতির নীলগাই উদ্ধার করা হয়েছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে আহত নীলগাইটিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পঞ্চগড় বন বিভাগে রাখা হয়েছে। সুস্থ হলে গাজীপুরের সাফারি পার্কে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ।
বুধবার (৯ এপ্রিল) দুপুরে ভারত থেকে পঞ্চগড় সদর উপজেলার প্রধানপাড়া সীমান্ত দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া ভেঙে বাংলাদেশে প্রবেশ করে নীলগাইটি।
এলাকাবাসী জানান, বুধবার দুপুরে স্থানীয় শত শত মানুষ হরিণ ভেবে নীলগাইটিকে তাড়া করে। বিকেলে জয়ধরভাঙ্গা এলাকায় পাঙ্গা নদীতে ঝাঁপ দিলে সেখান থেকে নীলগাইটিকে ধরে বেঁধে রাখে স্থানীয়রা। খবর পেয়ে পঞ্চগড় বন বিভাগের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে নীলগাইটি উদ্ধার করে পঞ্চগড় সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পঞ্চগড় বন বিভাগের একটি কক্ষে রাখা হয়।
সামাজিক বন বিভাগ পঞ্চগড়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হরিপদ দেবনাথ বলেন, নীলগাইটি ভারত থেকে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। কাঁটাতারের বেড়া ভেঙে বাংলাদেশে প্রবেশ করায় তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পেয়েছে। পরে স্থানীয়রা তাড়া করে গাইটিকে আটক করে রাখে। আমরা উদ্ধার করে বন বিভাগে নিয়ে এসেছি। বর্তমানে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সুস্থ হলে নীলগাইটিকে আমরা গাজীপুরের সাফারি পার্কে পাঠাব। নীলগাই বিলুপ্ত প্রজাতির প্রাণী এবং খুব ভীতু। মানুষ দেখলে তারা ভয় পায়। নীলগাইটির বয়স দুই আড়াই বছর হতে পারে।
এদিকে বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা জোহরা মিলা বলেন, সীমান্ত পেরিয়ে আসা নীলগাইগুলো প্রায়ই স্থানীয়দের মাধ্যমে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। এ ধরনের নৃশংতার অবসান হওয়া প্রয়োজন।
তিনি বলেন, দেখতে ঘোড়ার মতো হলেও নীলগাই প্রকৃতপক্ষে অ্যান্টিলোপ-জাতীয় প্রাণী। একসময় বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নওগাঁ, জয়পুরহাট এলাকার বনে প্রাণীটির দেখা মিলত। তবে ১৯৪০ সালের পর বাংলাদেশে আবাসিক নীলগাই দেখা গেছে, এমন তথ্য পাওয়া যায় না। অনিয়ন্ত্রিত শিকার, বাসস্থান ও খাদ্যের অভাবসহ প্রতিকূল পরিবেশের কারণে প্রাণীটি অনেক আগেই বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। প্রাণীটি সাধারণত দলবেঁধে থাকে। তবে গত কয়েক বছর ধরে মাঝেমধ্যে যে কয়েকটি নীলগাই উদ্ধারের খবর পাওয়া যায়, সেগুলো মূলত ভারত থেকে আসা। বর্তমানে ভারত ছাড়াও পাকিস্তান ও নেপালে নীলগাইয়ের বসবাস রয়েছে। তবে তার সংখ্যাও আশঙ্কাজনক।
মন্তব্য করুন