খুলনা নগরীতে ভাঙচুর ও লুটপাটের শিকার বাটা, কেএফসি ও ডোমিনোস পিৎজার শোরুম চালু নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। ভাঙচুর করার পর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে প্রতিষ্ঠান ৩টি। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় প্রতিষ্ঠান ৩টি আবার কবে চালু হবে তা বলতে পারছেন না কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ ঘটনায় সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় ৩টি পৃথক মামলায় অজ্ঞাত প্রায় ৩ হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
বুধবার (৯ এপ্রিল) সরেজমিন দেখা যায়, দুপুরে নগরীর শিববাড়ি মোড়ের বাটার শোরুম ত্রিপল দিয়ে ঢাকা। শোরুমটির ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, চারিদিকে ভাঙা কাচের স্তূপ। ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ভেঙে দেওয়া আসবাবপত্র ও জুতা-স্যান্ডেল। গত সোমবার ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ থেকে হামলা চালানো হয় ওই প্রতিষ্ঠানে।
বাটার ব্রাঞ্চ ম্যানেজার তৌহিদুল ইসলাম জানান, তাদের ৯০-৯৫ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। তাদের প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা-কর্মচারী চারজন। প্রতিষ্ঠানটি আবার কবে চালু হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটের দিকে একদল বিক্ষুব্ধ জনতা এ প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। হামলার সময়ে তারা কোটি টাকা মূল্যের জুতা এবং স্যান্ডেল লুটপাট ও ক্ষতিগ্রস্ত করে। যাওয়ার সময়ে ক্যাশ থেকে নগদ ৮৫ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায় তারা।
এ ঘটনার পর থেকে, নগরীর পিকচার প্যালেস মোড়, ডাকবাংলো মোড়, টাইগার গার্ডেন, দৌলতপুর, সোনাডাঙ্গা এবং নিউমার্কেট এলাকার বাটার শোরুমগুলো বন্ধ রয়েছে।
নগরীর ময়লাপোতা মোড়ে কেএফসি রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখা যায়, লাল দড়ি দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে ভবনটি। দোতলায় কেএফসিতে ওঠার সিঁড়ির সামনে চেয়ারে বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন রেস্টুরেন্টটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
তারা জানান, কেএফসিতে যে খাবার ছিল তা লুটপাট হয়েছে, অনেক খাবার বাইরে ফেলে দিয়েছে। এছাড়া সাইনবোর্ড, ভেতরের চেয়ার-টেবিল, ডেস্ক, ক্যাশ কাউন্টার, টিভি, এসি, ফ্রিজসহ সবকিছু ভেঙে তছনছ করে ফেলেছে। ক্যাশ কাউন্টার থেকে টাকা নিয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানটিতে ২৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে।
কেএফসির ব্রাঞ্চ ম্যানেজার সুজন মণ্ডল বলেন, তাদের কয়েক কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে। তবে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তাতে প্রতিষ্ঠানটি আবার কবে নাগাদ চালু হবে তা তিনি বলতে পারছেন না।
তারা জানান, বহুতল ভবনটির দোতলায় কেএফসি এবং নিচতলায় ডোমিনোজ পিৎজাতে ভাঙচুর-লুটপাট চালিয়েছে। তৃতীয় তলায় বেসরকারি সিটি মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল বিভাগের গ্লাস ভাঙচুর করেছে।
এদিকে, ৩ প্রতিষ্ঠান হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় পৃথক ৩টি মামলা হয়েছে। এতে অজ্ঞাত প্রায় ৩ হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। গত সোমবার রাতে আটক ৩১ জনকে ৩টি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে বলে জানায় পুলিশ।
সোনাডাঙ্গা থানার ওসি শফিকুল ইসলাম কালবেলাকে জানান, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় ম্যানেজার তৌহিদুল ইসলামের দায়ের করা মামলায় ১২০০-১৩০০ জন, কেএফসি ম্যানেজার সুজন মণ্ডলের মামলায় ৭০০-৮০০ এবং ডোমিনোজ পিৎজার ম্যানেজার শামসুল আলমের দায়ের করা মামলায় আরও ৭০০-৮০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। পৃথক তিনটি মামলায় বাদি তাদের এজাহারে নিজ প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ভাঙচুর, সম্পদ ও অর্থ লুটপাটের পাশাপাশি কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির কথা উল্লেখ করেছেন।
এ ঘটনায় খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দার কালবেলাকে বলেন, ছবি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে জড়িতদের শনাক্ত ও আটক করার চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন