নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে রবিনটেক্স নামের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে যৌথবাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় যৌথবাহিনীর কয়েকজন সদস্যসহ শতাধিক আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় ১১ জন শ্রমিককে আটক করা হয়েছে। অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছেন রবিনটেক্স কর্তৃপক্ষ।
বুধবার (৯ এপ্রিল) দুপুর ১২টা থেকে প্রায় ৩ ঘণ্টাব্যাপী রবিনটেক্স গার্মেন্টসের সামনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন- সেনাবাহিনীর লেফট্যানেন্ট মুবীন, সৈনিক বাঁধন, সোহরাব। এছাড়াও শ্রমিকদের মধ্যে- শাফিয়া, রুনা, মলিনা, মাজেদা ও রুপু আহত হন। অন্যান্য আহতদের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি। আহতদের উদ্ধার করে উপজেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
আটকরা হলেন- কারখানার শ্রমিক দাদুল হক, উজ্জ্বল মিয়া, সাদ্দাম হোসেন, আহাদ হোসেন, রাফি খান, সুমন মজুমদার, সুমন হোসাইন, মোজাম্মেল, মনিরুল ইসলাম ও রাসেল আলী। আরেকজনের পরিচয় জানা যায়নি।
পুলিশ ও কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদের আগে রবিনটেক্স কারখানার কয়েকজন শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়। প্রতিবাদে চাকরিচ্যুত শ্রমিকরা বুধবার সকালে কারখানার সামনে জড়ো হন। এর আগের দুইদিনও তারা কারখানার সামনে বিক্ষোভ করেন। বুধবার কারখানার অন্যান্য শ্রমিকরাও তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে কর্মবিরতি দিয়ে কারখানার ভেতরেই অবস্থান করেন। পরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানা থেকে বেরিয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে ব্যস্ততম মহাসড়কটিতে যানজট দেখা দিলে তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এক পর্যায়ে শ্রমিকদের সঙ্গে যৌথ বাহিনীর সদস্যদের সংঘর্ষ শুরু হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রবিনটেক্স কারখানার দুজন শ্রমিক বলেন, মালিকপক্ষ বিনা নোটিশে তাদের শতাধিক শ্রমিককে ছাঁটাই করেছে। গত মার্চ মাসের বেতন-বোনাসও তাদের আংশিক পরিশোধ করা হয়েছে। আমরা আমাদের ন্যায্য দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে কারখানার ভেতরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলাম। বিনা উসকানিতে পুলিশ ও সেনাবাহিনী আমাদের ওপর লাঠিচার্জ করে।
কারখানাটির অন্তত ৬০-৬৫ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন বলেও দাবি করেন শ্রমিকরা। আহতরা স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ বিষয়ে, কারখানাটির জেনারেল ম্যানেজার (অ্যাডমিন) আদনান শামসের কালবেলাকে জানান, শ্রম আইনের ২৬ ধারা অনুযায়ী ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। সকালে শ্রমিকরা অযৌক্তিক কারণে প্রোডাকশন বন্ধ করে দিয়ে কারখানা ভাঙচুর, কর্মকর্তাদের মারধর করেন। আইন মেনেই কয়েকজন শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছিল। কারখানার ভেতরে ভাঙচুর-লুটপাটের পর বাইরে গিয়ে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। বহিরাগত লোকজনও এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত আছে। বুধবার সন্ধ্যায় কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মিজানুর রহমান মিজান কালবেলাকে বলেন, রবিনটেক্স গার্মেন্টস কর্মীদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দেয়। এসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদেরকে কাজে যোগ দেওয়ার কথা বললে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। এতে শিল্প পুলিশের একজন সহকারী পুলিশ সুপারসহ অন্তত ২৫-৩০ জন সেনা ও পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মেহেদী ইসলাম জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১১ জনকে আটক করা হয়েছে। বিক্ষুব্ধরা আমার সরকারি গাড়িটিও ভাঙচুর করেছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও সাইফুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, রবিনটেক্স নামের একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। পরে শ্রমিকদের বুঝিয়ে কাজে যোগ দেওয়ার কথা বললে, কারখানার শ্রমিকরা যৌথ বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। এতে যৌথ বাহিনীর ২৫-৩০ জন সদস্য আহত হয়েছেন। এসময় তারা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে ফেলেন। পরে যৌথবাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এ ঘটনায় কারখানার ১১ জনকে আটক করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন