নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বিনা কারণে ছাঁটাই, বোনাস ও বকেয়া বেতনের দাবিতে রবিনটেক্স রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এসময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা টানা ৪ ঘণ্টা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে শ্রমিকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এসময় শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ প্রায় শতাধিক শ্রমিক আহত হয় বলে জানা গেছে।
বুধবার (৯ এপ্রিল) সকাল থেকে দিনব্যাপী ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে আউখাবো রবিনটেক্স পোশাক কারখানার সামনে এ ঘটনা ঘটে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিক্ষোভের কারণে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে।
বিক্ষুব্ধ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রূপগঞ্জ উপজেলার আউখাবো এলাকায় রবিনটেক্স নামে রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানায় প্রায় ৮-১০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গত ২৯ মার্চ থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত পোশাক পোশাক কারখানাটি বন্ধ রাখা হয়৷ বন্ধ দেওয়ার আগে গত ২৮ মার্চ বিনা নোটিশে কোনো প্রকার কারণ ছাড়াই ৬৫ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়। এছাড়া পোশাক কারখানা বন্ধ দেওয়ার আগে শ্রমিকদের ৬৫ শতাংশ বোনাস দেওয়ার কথা থাকলেও ৫০ শতাংশ মালিকপক্ষ প্রদান করেন। এছাড়া এক মাসের বেতন প্রদানের কথা থাকলেও ২০ দিনের বেতন দিয়েই কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। গত ৮ এপ্রিল মঙ্গলবার কারখানা খোলার দিন শ্রমিকরা মালিকপক্ষকে ছাঁটাইয়ের কারণ, বেতন ও বোনাস দেওয়ার কথা বললে মালিকপক্ষ নানা রকম টালবাহানা শুরু করেন। বুধবার সকালে আগের মতোই তাদের দাবি নিয়ে কারখানার ভেতরে অবস্থান করছিল। এসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের কাজে যোগ দেওয়ার কথা বললে তাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। পরে শ্রমিকরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পানির বোতল নিক্ষেপ করে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তাদেরকে লাঠিচার্জ করে সরিয়ে দেন। পরে শ্রমিকরা কারখানার বাইরে গিয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বিদ্যুতের খুঁটি ফেলে মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন।
এসময় মহাসড়ক থেকে শ্রমিকদের সরাতে গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে শ্রমিকদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় শ্রমিকরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এসময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সেনাবাহিনীর লেফটেনেন্ট মুবীন, সৈনিক বাঁধন, সোহরাব, মেহেদী, শ্রমিকদের মাঝে শাফিয়া, রুনা, মলিনা, মাজেদা, রুপুসহ শতাধিক আহত হয়েছেন। আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
আন্দোলনরত কয়েকজন শ্রমিক বলেন, ঈদের আগে আমাদের ৬৫ জন শ্রমিককে বিনা নোটিশে ছাঁটাই করে দেয় কর্তৃপক্ষ। আমরা আমাদের দাবি জানিয়ে আসছিলাম। আমরা কারখানার ভেতরে শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের দাবি আদায়ের চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আমাদের ওপর লাঠিচার্জ শুরু করেন। এতে নারীসহ আমাদের ৬৫ জন শ্রমিক আহত হয়। আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মিজানুর রহমান মিজান বলেন, রবিনটেক্স গার্মেন্টস কর্মীদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দেয়। এসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদেরকে কাজে যোগ দেওয়ার কথা বললে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য কয়েকজন আহত হয়েছেন।
এ ব্যাপারে জেলা নারায়ণগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মেহেদী হাসান কালবেলাকে জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক রয়েছে। আমার গাড়ির ভাঙচুর করা হয়েছে৷ আমাদের প্রায় ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। শ্রমিকরা এখনো বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করছেন। এখনো পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছি।
মন্তব্য করুন