কক্সবাজারের উখিয়ায় আপন চাচাতো ভাই-বোনদের মধ্যে জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে ভয়াবহ সংঘর্ষে রওশন আরা নামে আরও একজন মারা গেছেন। এ নিয়ে চারজনের প্রাণহানি ঘটেছে। নিহতদের মধ্যে দুজন পুরুষ ও দুই নারী।
বুধবার (৯ এপ্রিল) রাত ১টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন বলেন, কুতুপালং পশ্চিম পাড়া গ্রামের সামান্য জায়গা নিয়ে দুপক্ষের মাঝে বিরোধ চলে আসছিল। এ বিরোধের জের ধরে রোববার সকালে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ নিয়ে দুপক্ষের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পাল্টাপাল্টি হামলা ও এলোপাতাড়ি কোপাকুপিতে উভয়পক্ষের অনেকে আহত হন। পরে স্থানীয় লোকজন তাদের গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার রাতে আরও একজন মারা যান।
স্থানীয়রা বলছেন, এক সময়ের পারিবারিক স্নেহের সম্পর্ক এখন প্রাণঘাতী শত্রুতায় পরিণত হয়েছে। ঘটনার দিন দা-কুড়াল ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হন উভয়পক্ষ। নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-যুবক সবাই সংঘর্ষে জড়ায়, যা বিরল ও বেদনাদায়ক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক শিক্ষক বলেন, রক্তের সম্পর্কে এমন ভয়ংকর শত্রুতা আমাদের সামাজিক কাঠামোকে নড়বড়ে করে তুলছে। পারিবারিক বিরোধের আইনি সমাধান না হলে ভবিষ্যতে আরও বড় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। ঘটনাটি শুধু একটি পারিবারিক দ্বন্দ্ব নয়, বরং সামাজিক মূল্যবোধ, আইনের প্রয়োগ ও সচেতনতার অভাবের এক করুণ চিত্র। এ ধরনের রক্তক্ষয়ী পরিণতি যেন আর না ঘটে, সে জন্য সমাজের প্রতিটি স্তরে আলোচনার দরকার।
উখিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ আরিফ হোছাইন বলেন, জমিসংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে উভয়পক্ষই পাল্টাপাল্টি মামলা করেছে। এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে।
তিনি বলেন, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ও জটিল পারিবারিক বিরোধ থেকে উদ্ভূত ঘটনা। আমরা কঠোরভাবে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এ ঘটনায় এলাকায় এখন চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। কেউ কেউ পালিয়ে বেড়াচ্ছে, কেউ আতঙ্কে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মুরুব্বিরা এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, সে বিষয়ে প্রশাসনের সক্রিয় হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এর আগে গত রোববার (৬ এপ্রিল) সকালে উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের কুতুপালং ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম পাড়া এলাকায় জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে একই পরিবারের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। ওইদিন মারা যান স্থানীয় মসজিদের খতিব ও জামায়াত নেতা মাওলানা আবদুল্লাহ আল মামুন (৪৫), প্রতিপক্ষের মোহাম্মদ হোসাইনের ছেলে আব্দুল মান্নান (৩৭) ও তার বোন শাহিনা বেগম (৪০)। নিহতরা সম্পর্কে আপন চাচাতো-জেঠাতো ভাইবোন।
নিহত আব্দুল মান্নানের আরেক বোন পিংকি কক্সবাজার ডিজিটাল হাসপাতালে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। নিহত মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মামুনের ছোট ভাই আব্দুল হামিদ চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসাধীন আছেন। ঘটনার পর থেকে এলাকায় চরম উত্তেজনা ও শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
উল্লেখ্য, আব্দুল মান্নান তার পৈতৃকসূত্রে পাওয়া ২০ কড়া জমি বিক্রি করে দেন কয়েক বছর আগে। সেই জমি ক্রেতাকে বুঝিয়ে দিতে গেলে মান্নানের চাচাতো ভাই মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মামুনের পরিবারের সদস্যরা বাধা দেন, সেখান থেকেই সংঘর্ষের ঘটনার সূত্রপাত।
মন্তব্য করুন