ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের উপদেষ্টা কাজল আহমেদ জালালীর বাড়িতে সন্ত্রাসী হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। বাদীপক্ষের অভিযোগ, ঘটনার দিন রাতে থানায় অভিযোগ করার ছয় দিন পার হলেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না পুলিশ।
এর আগে গত মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় হামলার ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, পূর্ববিরোধের জেরে কাজল আহমেদ জালালীর বাড়িতে একদল সশস্ত্র দুর্বৃত্ত দফায় দফায় হামলা চালিয়ে তিনজনকে গুরুতর জখম করে। হামলাকারীরা বাদীর বসতবাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়ে নগদ টাকা এবং স্বর্ণালঙ্কারসহ প্রায় লক্ষাধিক টাকার সম্পদ লুটে নেয়। হামলায় আহতরা হলেন- সাইদুল আলম (৩২), তার ছোট ভাই অন্তর জালালী (২১) এবং তাদের বৃদ্ধা মা চায়না আক্তার (৫৫)। এ ঘটনায় কাজল আহমেদ জালালির ভাতিজা সাইদুল আলম বাদী হয়ে ছাত্রদল নেতা নয়ন হত্যা মামলার আসামি আনারুল ও তার ভাগিনা ছাত্রলীগ নেতা রিয়াদুল হাসান বাবুসহ ৯ জনকে আসামি করে বাঞ্ছারামপুর মডেল থানায় একটি অভিযোগ করেন।
অভিযুক্তরা হলেন- রুপসদী গ্রামের পশ্চিম কান্দাপাড়ার কালু মিয়ার ছেলে মো. আনারুল হক (৫২), বাছেদ মিয়ার ছেলে রিয়াদুল হাসান বাবু (৩১), কালু মিয়ার ছেলে মো. খাইরুল ইসলাম (৪৫), ইসহাক মিয়ার ছেলে আব্দুল কাদির (২০), মানিক মিয়ার ছেলে শান্ত মিয়া (২০), মৃত ইউনুস মিয়ার ছেলে আবু মিয়া, মৃত নোয়াব আলীর ছেলে স্বপন মিয়া (৫৫), মৃত মঙ্গল মিয়ার ছেলে ইকবাল মিয়া (৫৫), মান্নান মিয়ার ছেলে শফিক মিয়াসহ আরও ৫/৬ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার রুপসদী ইউনিয়নের রুপসদী গ্রামের পশ্চিম কান্দাপাড়ার বাসিন্দা আনারুল হকের নির্দেশে রিয়াদুল হাসান বাবু, খাইরুল ইসলামসহ নয়জনের একটি সন্ত্রাসী দল এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৫/৬ জন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে ৭টার দিকে প্রথমে রুপসদী উত্তর বাজার মাঠের পশ্চিম গোলবারের পাশে সাইদুল আলমের পথরোধ করে অতর্কিত হামলা চালায়। লোহার পাইপের আঘাতে সাইদুল আলমের ডান হাতের কবজি ভেঙে যায় এবং কাঠের আঘাতে তার নাক ফেটে রক্তক্ষরণ হয়। শাবলের আঘাতে তার ডান পায়ের আঙ্গুলও গুরুতর জখম হয়। ভাইকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে অন্তর জালালীর হাঁটুতে লোহার রড দিয়ে আঘাত করা হয় এবং পিঠে হাতুড়ির আঘাত লাগে।
তাদের চিৎকার শুনে মা চায়না আক্তার এগিয়ে এলে হামলাকারীরা তার চুল ধরে টানাহেঁচড়া করে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে এবং পরনের কাপড় ছিঁড়ে ফেলে। কাঠ দিয়ে তার বুকে ও পাইপ দিয়ে কোমরে আঘাত করা হয়। এক পর্যায়ে হামলাকারীরা চায়না আক্তারের গলাটিপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যাচেষ্টা করে এবং তার গলা থেকে আনুমানিক ১ ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন ও লকেট ছিনিয়ে নেয়।
আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর হামলাকারীরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। বাদীর অভিযোগ, তারা পুনরায় দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের বসতবাড়িতে হামলা চালায়। সেখানে ব্যাপক ভাঙচুর করে প্রায় এক লাখ ৭০ হাজার টাকার ক্ষতি করে। এরপর সিন্দুক ভেঙে নগদ সাত লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং পাঁচ ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়। এ ছাড়া হামলাকারীরা পালিয়ে যাওয়ার সময় বাদী ও তার পরিবারকে আইনি পদক্ষেপ নিলে প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
বাদী সাইদুল আলম বলেন, আমি বিকেলে মাঠের কোণায় দাঁড়ানো থাকা অবস্থায় তারা পূর্বপরিকল্পিতভাবে আমার এবং আমার ছোট ভাইয়ের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। পরে আনারুলে নির্দেশে তার ভাগিনা বাবুসহ একদল আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী আমাদের হত্যার উদ্দেশ্যে আমার বাড়িতে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা ও লুটপাট চালায়। আমার মা ও পরিবারের লোকজনকে মারধর করে আমার ব্যবসার সব টাকাপয়সা, সোনা নিয়ে যায়। আমি বাদী হয়ে থানায় অভিযোগ করেছি আজ পাঁচ দিন- এখন পর্যন্ত কোনো সুরাহা নেই। আমি আমার জীবন নিয়ে ঝুঁকিতে আছি। থানা পুলিশ আমাকে কোনো সহযোগিতা করছে না। প্রশাসনের কাছে আকুল আবেদন তারা যেন আমাকে সহযোগিতা করে।
বাদীর ছোট ভাই অন্তর আহমেদ জালালী বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আমি জড়িত ছিলাম। রুপসদীতে আমি মিছিল করি। আন্দোলনে জড়িত থাকার কারণে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বাবু আমাকে হত্যাচেষ্টা করে এবং রাতে দা দিয়ে দৌড়ায়। পরে আমি নবীনগর গিয়ে আশ্রয় নেই। পূর্বশত্রুতা থেকে তারা আমি এবং আমার ভাইয়ের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। পরে তারা আমাদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট করে আমাদের ব্যবসার টাকা, আমার বোনের সব গহনাসহ বিভিন্ন মালামাল লুটপাট করে। আমার বৃদ্ধা মাকেও হত্যার চেষ্টা করে। আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা চাইলে তারা আমাদের সহযোগিতা না করে উল্টো মামলা চাপিয়ে দিতে চেষ্টা করে। এখন পর্যন্ত প্রশাসনের কোনো সহযোগিতা পাইনি।
এ বিষয়ে বাঞ্ছারামপুর মডেল থানার ওসি মোরশেদুল আলম চৌধুরী কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, এসপি স্যারের অনুমতি ছাড়া আমি কোনো মন্তব্য করতে পারব না। আপনি মিডিয়া উইংয়ের সঙ্গে কথা বলেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপার কার্যালয়ের মিডিয়া উইংয়ের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর উত্তম বলেন, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানা দেখবেন, ওসি সাহেব বিস্তারিত বলবেন। মিডিয়া উইংয়ের কাজ এটা না। থানার খুঁটিনাটি ওসি সাহেব জানেন। আমাদের কাজ হলো কোনো আসামি গ্রেপ্তার হলে মিডিয়া উইংয়ের মাধ্যমে আমরা সবাইকে জানাই।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার পুলিশ সুপার এহতেশামুল হককে ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
মন্তব্য করুন