সম্প্রতি ঘোষণা হয়েছে খুলনা জেলা বিএনপির ৬১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি। খুলনায় ৯টি উপজেলা থাকলেও এক উপজেলায়ই দেওয়া হয়েছে এক তৃতীয়াংশ সদস্য। এছাড়া গেল ৫ আগস্টের পর জেলার বিভিন্ন স্থানে দখল, লুটপাট ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে যারা শোকজ হয়েছেন তারাও কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। স্থান পেয়েছে ২৫ বছর ধরে আমেরিকান প্রবাসীও।
ফলে বিতর্কিত ও সুবিধাভোগীদের দিয়ে কমিটি করায় ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে খুলনা বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তৃণমূলে থাকা রাজপথের কর্মীরা যারা দীর্ঘদিন মামলার আসামি হয়ে রাজপথে ছিলেন তাদের কমিটিতে স্থান দেওয়ার নির্দেশনা ছিল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের। তবে দীর্ঘদিন দলীয় সভা সমাবেশে অনুপস্থিতিসহ নানাভাবে বিতর্কিতদের নিয়ে কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে যা সর্বত্র আলোচনা ছড়াচ্ছে।
আলোচনা শুরু হয় গত ১৩ ডিসেম্বর খুলনা জেলা বিএনপির তিন সদস্যের নতুন আহ্বায়ক (আংশিক) কমিটি ঘোষণা করা নিয়ে। ওই কমিটিতে মনিরুজ্জামান ওরফে মন্টুকে আহ্বায়ক, শেখ আবু হোসেন ওরফে বাবুকে সদস্য সচিব এবং মোমরেজুল ইসলামকে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক করে কমিটি গঠনের দিনই। জেলা আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টুর বিরুদ্ধে আপস করে রাজনীতির অভিযোগ করছেন নেতাকর্মীরা।
জেলা বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, যাকে আহ্বায়ক বানানো হয়েছে তিনি নিজেই রাজনীতিতে সবসময় সক্রিয় ছিলেন না। গত ১৫ বছরে খুলনার কোনো থানায় তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা জিডি হয়নি। সম্প্রতি গত ২৮ মার্চ ৬১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এর পরপরই চরম বিতর্ক শুরু হয় এই কমিটি নিয়ে। দেখা যায়, ৬১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির ১৮ জনই রূপসা এলাকার।
এই এলাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলালের বাড়ি হওয়ায় ওই উপজেলায় ৫ জন যুগ্ম আহ্বায়কসহ প্রায় এক তৃতীয়াংশ সদস্য হয়েছে বলে অভিযোগ নেতাকর্মীদের। তার ভাই এবং বন্ধুও কমিটিতে স্থান পেয়েছেন।
এছাড়া কয়রায় একাধিক ঘের দখল মামলার আসামি সাইদ বিশ্বাস, রূপসার টিএসবি ইউনিয়নে নৌকার পক্ষে প্রচারণা করে কামরুজ্জামান টুকু, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অশ্লীল ভিডিও ভাইরাল হওয়া কপিলমুনির শামসুল আলম পিন্টু, রেন্ট এ কার ব্যবসায়ী আতিক, সমিতির ব্যবসায়ী রবিউল, ডুমুরিয়ার সন্তান ২৫ বছর ধরে আমেরিকান প্রবাসী টিকু রহমান, দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে শোকজ হওয়া জিএম রফিকুল, বিগত ১০ বছর ধরে নিষ্ক্রিয় অহিদুজ্জামান রানাসহ অসংখ্য নেতাকর্মী জেলা কমিটিতে স্থান পেয়েছেন।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে একাধিক নেতা বলেন, কমিটি দেখে আমরা হতাশ। যারা আওয়ামী লীগের সময়ে রাজপথে ছিল, মামলা ও হামলার স্বীকার হয়েছিল তাদের অনেকেই কমিটিতে স্থান পাননি। এমনকি দলের নির্দেশনা অমান্য করে ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে যারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল, বিভিন্ন কারণে সমাজে যারা বিতর্কিত তারাই পদ পেয়েছে।
আমেরিকা প্রবাসী ও জেলা বিএনপির সদস্য টিকু রহমান বলেন, আমি ২৫ বছর ধরে বিদেশে আছি। তবে প্রতি বছরই দেশে যাই। মহানগরের ছাত্রনেতা ছিলাম। করোনার সময়সহ বিভিন্ন সময়ে বিএনপির পাশে থেকে নেপথ্যে আমি কাজ করেছি।
কমিটি প্রকাশের পরপরই অসুস্থ হয়ে পড়েন রাজনীতিতে সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবু হোসেন বাবু। বর্তমানে তিনি ঢাকায় চিকিৎসাধীন।
জেলা কমিটির বর্তমান আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু বলেন, আমার মামলা আছে কি না এটা আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সবকিছু বুঝে শুনেই কমিটি দিয়েছে। আমরা কোনো বিতর্কিত কমিটি করিনি। গত কমিটির ৯০ শতাংশ নেতা এই কমিটিতে আছেন। কয়েকজন সম্প্রতি যুবদল ছাত্রদল থেকে এসেছে। সবচেয়ে বড় কথা- এটা স্বল্প মেয়াদি কমিটি। মূল কমিটি গঠন করার আগে কেন্দ্রীয় নেতারা সার্বিক বিষয় বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেবেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর খুলনা জেলা বিএনপির আগের আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় কমিটি। এরপর গত ১৩ ডিসেম্বর খুলনা জেলা বিএনপির তিন সদস্যের নতুন আহ্বায়ক (আংশিক) কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটিতে মনিরুজ্জামান ওরফে মন্টুকে আহ্বায়ক, শেখ আবু হোসেন ওরফে বাবুকে সদস্য সচিব এবং মোমরেজুল ইসলামকে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়।
মন্তব্য করুন